ঘাটাইলে হঠাৎ ঝড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ চার শতাধিক কাঁচা ও আধা পাকা ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। উপড়ে গেছে কমপক্ষে দুই হাজার গাছ। গতকাল শনিবার ভোরে উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ওপর দিয়ে এ ঝড় বয়ে যায়। এতে বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। নষ্ট হয়েছে খেতের পাকা ধান। ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
আরও জানা গেছে, ভোর ৫টার দিকে শুরু হওয়া প্রায় ১৫ মিনিটের ঝড়ে উপজেলার দেউলাবাড়ি, রসুলপুর ও লক্ষ্মীন্দর ইউনিয়নের বাসিন্দারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঝড়ে দেউলাবাড়ি ইউনিয়নে এমকেডিআর উচ্চবিদ্যালয়ের তিনটি টিনশেড ভবন ধসে যায়। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হায়দার আলী জানান, এতে বিদ্যালয়টির ৪০ লক্ষাধিক টাকার সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই ইউনিয়নের দেউলাবাড়ি, উত্তর খিলগাতি, মুখ্যগাংগাইর ও চকপাড়া গ্রামের দুই শতাধিক কাঁচা ও আধা পাকা ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে।
এদিকে গাছের চাপায় উত্তর খিলগাতি গ্রামে স্কুলছাত্রীসহ একই পরিবারের তিনজন আহত হয়েছে। তাঁরা হলেন আতাউর রহমান খান (৭০), তাঁর ছেলে মো. রফিকুল ইসলাম (৪৫) এবং নাতি স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী রিয়া (১৩)। দেউলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুজাত আলী খান বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে বাড়িঘর, গাছপালাসহ ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।’
এ ছাড়া রসুলপুর ইউনিয়নের মোমিনপুর, গড়ানচালা, লক্ষ্মীন্দর ইউনিয়নের ফটিয়ামারি, সিংহেরচালা, মুরাইদ, চাকপাড়াসহ ১৫টির বেশি গ্রামে দুই শতাধিক ঘর ভেঙে গেছে বলে গ্রামবাসী জানান।
এদিকে ঝড়ে সড়কের ওপর গাছ পড়ে উপজেলার গারোবাজার-সাগরদিঘী সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে চরম দুর্ভোগ পড়ে হাজারো যাত্রী। দুপুরের দিকে গাছ সরানোর পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। অন্যদিকে ঝড়ে বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গিয়ে এবং তার ছিঁড়ে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ায় অনেক পরিবার অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। ঝড়ে এই তিন ইউনিয়নের মাঠের পাকা ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
লক্ষ্মীন্দর গ্রামের কৃষক রশিদ মিয়া বলেন, গোয়ালঘরের ওপর বিশালাকৃতির গাছ উপড়ে পড়ায় দুটি গরু ও একটি ছাগল মারা গেছে। এ ছাড়া ঝড় ও ভারী বৃষ্টিতে পাকা ধান ছাড়াও আম, লিচু, কলাসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. এনামুল হক জানান, ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলোতে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে। ক্ষতিগ্রস্তদের নামের তালিকা ও ক্ষতির পরিমাণ জানাতে ইউপি চেয়ারম্যানদের বলা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিয়া চৌধুরী বলেন, ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পাঠানো হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ শেষে সাহায্যের ব্যবস্থা করা হবে।