বান্দরবানের রুমায় প্রকল্পের প্রথম দফা মেয়াদ শেষ হয়েছে দুই বছর আগে। আবেদন করে সময় বাড়িয়ে এবার রাস্তার কাজ শুরু করেছেন ঠিকাদার। এর মধ্যেও নিম্নমানের ইট ব্যবহার, বালুর বদলে মাটি দেওয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ঠিকাদারের দাবি, দুর্গম এলাকা হওয়ায় এই অনিয়ম হয়েছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, রুমা সদর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে রুমানাপাড়া থেকে সুনসংপাড়া পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের (পাচউবো)। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের ২০ ডিসেম্বর প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রী (তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী) বীর বাহাদুর উশৈসিং।
এদিকে প্রকল্পের বাস্তবায়নের মেয়াদ দুই বছর আগেই শেষ হয়ে গেছে। তবে প্রকল্পের ৫ বছরের মাথায় ২০২২ সালে এসে রাস্তার নির্মাণকাজ শুরু করেছে ঠিকাদার। এতে নিম্নমানের ইট ব্যবহারসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় এলাকার লোকজন জানায়, গত মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে রুমানাপাড়া থেকে সুনসংপাড়া রাস্তায় ইট বিছানো শুরু হয়েছে। কিন্তু ইটগুলো খুবই নিম্নমানের। এগুলো ইট না বলে মাটির ঢেলা বলাই ঠিক হবে। হাতের চাপেই ইটগুলো ভেঙে যাচ্ছে। গত সপ্তাহে রুমা সদর ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) ভিজিডি চাল নিতে আসা রুমানাপাড়ার কয়েকজন বাসিন্দা ওই তথ্য জানান। এ সময় তাঁরা রুমানাপাড়ায় গিয়ে অবস্থা দেখার অনুরোধ জানান।
গত শুক্রবার দুপুরে সুনসংপাড়ায় দেখা যায়, পাড়ার কাছেই সুনসংপাড়া জুনিয়র হাইস্কুলের সামনে ট্রাক থেকে ইট নামানো হচ্ছে। হাতে ভারসাম্য রক্ষা করে ইটগুলো নামাচ্ছেন কয়েকজন শ্রমিক।
জানতে চাইলে মনির নামে এক শ্রমিক বলেন, ‘এত আস্তে করে নামার পরও ভেঙে যায়। ইট তো ভালা না। কী করমু আর!’
এ সময় নতুন রুমানাপাড়ার বাসিন্দা রামা বম (৪৯) বলেন, ‘সুনসংপাড়ার সমাধি থেকে শুরু করে প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তায় ইট বিছানো হয়ে গেছে। ইটের ফাঁকে ও ইটের ওপরে দু-তিন ইঞ্চি পুরু করে মাটি ফেলা হয়েছে। এ কারণে বিছানো ইটগুলো সহজে দেখা যায় না। তবে এটা তো ইট নয়, মাটির ঢেলা।’ নতুন রুমানাপাড়া বাসিন্দা নলতিহ্লির বম বলেন, ‘হেঁটে গেলে যে কারও কাছে এই রাস্তায় ইট নয়, মাটি জমেছে—এমনই মনে হবে।’
এদিকে ইট নিয়ে সরাসরি ‘কোম্পানি মিলনের’ কাছে জেনে নিতে বললেন ‘বক্কর’ নামের এক শ্রমিক। এ সময় আরেক শ্রমিক বলেন, ‘তোর আসল নাম কও না ক্যান।’
সুনসংপাড়া প্রধান কার্বারি রবার্ট বম আক্ষেপ করে বলেন, ‘কয়েক দিন আগে উন্নয়ন বোর্ডের বড় ইঞ্জিনিয়ার (নির্বাহী প্রকৌশলী) কাজ দেখতে এসেছিলেন। দেখা হলে রাস্তায় বিছানো ইট তুলে দেখাতাম—এটা ইট, নাকি মাটির দলা! সেদিন কৌশলে ইঞ্জিনিয়ারকে নতুন রুমানাপাড়ার পার্শ্ববর্তী এলাকায় ঠিকাদার মিলনের ইটভাটায় ঘুরিয়ে নিয়ে গেছেন। তাই বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি।’ তবে দেখা হলে, সরকারি টাকায় রাস্তার কাজ ভালো করার জন্য প্রকৌশলীকে অনুরোধ করতেন বলে জানান। রেমাক্রী-প্রাংসা মোজা হেডম্যান লালজৌ খুম বম বলেন, ‘মিলন কোম্পানির ইটভাটায় গত বছরের শুরু থেকে ইটগুলো দেখতে লাল দেখা গেলেও তা নিম্নমানে। এ ইট দিয়ে রাস্তা তৈরির চেয়ে না করে রাখাই হবে বেশি ভালো।’
জানতে চাইলে ঠিকাদার মোহাম্মদ নুরুজ্জামান মিলন (মিলন কোম্পানি) মোবাইল ফোনে বলেন, ‘চুলার বাইরের ইটগুলো ভালো না হলেও রুমানাপাড়ায় আমার ইটভাটার চুলার মধ্যের ইটগুলো ভালো। ওই ইট দিয়ে কাজ করা হবে।’ বালুর বদলে মাটি দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দুর্গম এলাকার কাজ। সবাইকে বিবেচনায় রাখতে হবে।’
জানতে চাইলে পাচউবো বান্দরবান ইউনিটের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বিন মো. ইয়াসির আরাফাত বলেন, ‘রাস্তায় সলিং কাজে নিম্নমানের ইট দেওয়া বন্ধ করে দিয়ে এসেছি।’ বর্তমানে কাজটি চলছে জানালে তিনি বলেন, ‘ঠিকাদারকে এ কাজে কোনো বিল দেওয়া হবে না।’
এর আগে ১ এপ্রিল পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাসহ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন ওই প্রকৌশলী। গতকাল শনিবার বিকেলে ঠিকাদারের শ্রমিকেরা নতুন রুমানা-সুনসংপাড়া রাস্তায় ইট সলিংয়ের কাজ করছিল।