বগুড়ার সারিয়াকান্দি পৌর এলাকার শিশু স্বপন। বয়স ৭ বছর। মা-বাবার বিচ্ছেদ হয়েছে। নানি সোনাভান বেগমের কাছে থাকে। নানা মারা গেছেন। অভাবের সংসারে সে বিদ্যালয়ের মুখ দেখেনি। সারা দিন ঘুরে বেড়াত পৌর এলাকায়। আর তাকিয়ে থাকত তার সমবয়সী ছেলেমেয়েদের দিকে। তাদের দেখে ইচ্ছে করত বিদ্যালয়ে যাওয়ার। তবে এবার তার বিদ্যালয়ে যাওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।
স্বপনের সঙ্গে পরিচয় হয় সারিয়াকান্দি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ফেস’-এর সভাপতি রাজিয়া সুলতানার সঙ্গে। স্বপনের দরিদ্রতার কারণে স্কুলে যাওয়া হয়নি শুনে রাজিয়া তার লেখাপড়া করার জন্য সব দায়িত্ব গ্রহণ করেন। স্বপনের স্কুলে যাওয়ার জন্য যাবতীয় পোশাক, স্কুল ব্যাগ কিনে দিয়েছেন। সেই সঙ্গে পাঠ্য বইয়ের বাইরে বর্ণমালা ও অক্ষর শেখার জন্য বেশ কিছু বইও কিনে দিয়েছেন। তাকে স্কুলে ভর্তি করেছেন রাজিয়া।
স্বপনকে যথেষ্ট স্নেহ-ভালোবাসায় গ্রহণ করেছে সারিয়াকান্দি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক এবং ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা। সে এখন প্রথম শ্রেণিতে পড়ে।
স্বপনের বড় বোন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। তার নানি কখনো মানুষের বাসায় কাজ করেন। কখনো জ্বালানি সংগ্রহ করে বিক্রি করে সংসার চালান। তার নানির ভাঙা ঘরের ভেতর বৃষ্টির পানি পরত। গত বছর স্থানীয় সাংসদ সাহাদারা মান্নানের সাহায্যে কোনোমতে ঘরটি মেরামত করে মাথা গোঁজার ঠাঁই করেছেন।
স্বপন বলে, ‘হামি কখনো ভাবিনি স্কুলে যাবার পামু। আগে হামার কুনো বন্ধু আছিল না। একন হামার মেলা বন্ধু। একন হামি এক দুই গুনবের পাই, অ আ ক খ কবার পাই।’
স্বপনের নানি বলেন, ‘নিজের পেটের ভাতই জোগার করবের পাইনে। তার ওপর আবার হামার ঘাড়ের ওপর দুই নাতি। যা হোক স্বপনের পড়াশোনার দায়ভার রাজিয়া নিছে।’
রাজিয়া সুলতানা বলেন, ‘আমাদের অগোচরে দারিদ্র্যতার কারণে উপজেলার অনেক শিশুই শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। আমরা সচেতন নাগরিকেরা যদি সবাই গরিব মানুষের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করি, তাহলে এক সময় সমাজ থেকে ধনী-গরিবের বৈষম্য দূর হবে। কোনো শিশুই শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে না।’