চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে গড়ে ওঠা ১৪টি অক্সিজেন প্ল্যান্ট কারখানার মধ্যে ১১ টিতেই নেই অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা। এসব কারখানায় যেকোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে দুটি কারখানায় ফায়ার সেফটি প্ল্যান থাকলেও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলছে তাদের কার্যক্রম।
সম্প্রতি সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও হতাহতের ঘটনার পর অক্সিজেন কারখানার অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে ফায়ার সার্ভিসের গঠিত তদন্ত কমিটি জেলা প্রশাসক বরাবর একটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। এ প্রতিবেদনে ১১টি অক্সিজেন কারখানার অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেন তদন্ত কমিটির প্রধান সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা মো. নুরুল আলম দুলাল।
ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত প্রতিবেদনে জানা গেছে, সীতাকুণ্ডে অবস্থিত ব্রাদার্স অক্সিজেন লিমিটেড, গোল্ডেন অক্সিজেন লিমিটেড, মাস্টার স্টিল অ্যান্ড অক্সিজেন লিমিটেড, লিন্ডে বাংলাদেশ লিমিটেড, আবুল খায়ের স্টিল মেলটিং লিমিটেডের অক্সিজেন কারখানা, কবির অক্সিজেন লিমিটেড, অ্যাসোসিয়েট অক্সিজেন লিমিটেড, রিগ্যাল অক্সিজেন, শীতলপুর অক্সিজেন লিমিটেড, অক্সিকো লিমিটেড ও মানতি স্টিল অ্যান্ড অক্সিজেন লিমিটেড কারখানার ফায়ার সেফটি প্ল্যান নেই।
তবে কে আর অক্সিজেন কারখানা ও সুবেদার অক্সিজেন কারখানায় ফায়ার সেফটি প্ল্যান থাকলেও কারখানা দুটি চলছে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। তদন্ত কমিটির প্রধান সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা মো. নুরুল আলম দুলাল বলেন, গত ৪ মার্চ সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কদমরসুল (কেশবপুর) এলাকার সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্ট কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে সাতজনের প্রাণহানি এবং ২৫ জন আহত হন। ওই ঘটনার পর সীতাকুণ্ডের অক্সিজেন কারখানাগুলোতে অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তারা তদন্ত পরবর্তী সময়ে লিখিত প্রতিবেদন ২০ মার্চ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন। তদন্তে তারা সীতাকুণ্ডের ১৪টি অক্সিজেন কারখানার মধ্যে ১১ টিতে অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা না থাকার প্রমাণ পায়। তবে অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা থাকা তিনটি কারখানার মধ্যে জিপিএইচ অক্সিজেন কারখানা ঝুঁকিহীনভাবে চললেও অধিকতর ঝুঁকিতে রয়েছে কে আর ও সুবেদার অক্সিজেন কারখানা।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক আব্দুল হালিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, তাঁদের গঠিত তদন্ত কমিটি জেলা প্রশাসক বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ অক্সিজেন কারখানাগুলোকে অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিতের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে একটি সমন্বিত কমিটি গঠন করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শীতলপুর অক্সিজেন প্ল্যান্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজিম উদ্দিন বলেন, তাঁদের ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদনের কাগজপত্র রয়েছে। স্ক্র্যাপ জাহাজের কাটিং কাজের জন্য তাঁরা অক্সিজেন কারখানাটি গড়ে তুলেছিলেন। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে জাহাজ আমদানি বন্ধ থাকায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে তাঁদের অক্সিজেন কারখানাটি।
অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে আবুল খায়ের স্টিল মিলের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) ইমরুল কাদের ভূঁইয়া বলেন, তাঁদের অক্সিজেন কারখানায় ফায়ার সেফটি প্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য তাঁরা আবেদন করে রেখেছেন। আশা করছেন তা শিগগিরই পাবেন তাঁরা। তবে ফায়ার সেফটি প্ল্যান না থাকলেও তাঁদের কারখানায় জলাধার, ফায়ার হাইড্রেন্ট সিস্টেম ও উন্নতমানের ফায়ার সেফটি ইকুইপমেন্ট রয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, প্রতিবেদনে যেসব অক্সিজেন কারখানার কথা উঠে এসেছে, সেগুলোর অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে এক সপ্তাহ সময় বেঁধে দেওয়া হবে। যেসব কারখানা বেঁধে দেওয়া সময়ে ফায়ার সেফটি প্ল্যান বাস্তবায়নের কাজ করবে না তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।