হোম > ছাপা সংস্করণ

বিনা টাকায় কবর খোঁড়েন তিনি

বরুড়া প্রতিনিধি

বরুড়া উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের নলুয়া চাঁদপুর গ্রামের বাসিন্দা সফিউল্লাহ মিয়া (৫৮)। তিনি ৪০ বছর বিনা পারিশ্রমিকে কবর খোদাই করে দিচ্ছেন। এ পর্যন্ত তিনি আনুমানিক দেড় হাজার কবর খুঁড়েছেন বলে জানান।

ইউনিয়নে কারও মৃত্যুর খবর শুনলে ছুটে যান সফিউল্লাহ মিয়া। নিজেই নেন লাশের মাপ। রাত কিংবা ভোর অথবা দিনের কোনো সময়, সঙ্গী কেউ থাকুক বা না থাকুক, কবরের স্থানটি যতই ঝোপঝাড়ে হোক না কেন, তাঁর কিছুতেই আপত্তি নেই। ধনী-গরিব সবার কবর একই যত্নে খুঁড়ে দেন তিনি।

স্থানীয় স্কুলশিক্ষক শাহ আলম বলেন, ‘সফিউল্লাহ আমাদের এলাকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করেন। প্রায় ৪০ বছরে মারা যাওয়া শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার কবরেই তাঁর হাত রয়েছে। আমার বাবার কবরও খুঁড়েছেন তিনি। কোনো টাকা নেননি। পরে জোর করে সামান্য কিছু খরচ দিয়েছি। এতে আমার ওপর রাগ করেছেন।’

সফিউল্লাহর ছেলে মাদরাসা শিক্ষক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘বাবার কাজ আমাদের কাছে খুবই ভালো লাগে। ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি তিনি মানুষের বাড়ি ও কৃষিজমিতে কাজ করতেন। সেই টাকা দিয়ে আমাদের তিন বোন আর দুই ভাই ও মাসহ ছয়জনের সংসার চালাতেন। অনেক কষ্ট করতেন। অনেক সময় সকালে কাজ শুরু করতেন সন্ধ্যায় বাজার নিয়ে বাড়ি ফিরতেন। এর মধ্যে কেউ মারা গেলে শরীরের ক্লান্তি ভুলে কবর খুঁড়তে চলে যেতেন। এখন তাঁর বয়স হয়েছে। তবু ছুটে যান। সবাই টাকা দিতে চায়। কিন্তু এটি বাবার অপছন্দ।’

সফিউল্লাহ মিয়া বলেন, ‘যখন ১৮ বা ১৯ বছরের যুবক ছিলাম, তখন থেকে আমি কবর খোঁড়ার কাজ শুরু করি। প্রথম দিকে এই কাজে আমি আগ্রহী ছিলাম না। তখন আমার মামা মহব্বত আলী আমাকে এই কাজে আগ্রহী করে তোলেন। এরপর এলাকার কবর খুঁড়তে জানা প্রত্যেকেই এক এক করে পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। একটা সময় গেছে, যখন শুধু আমিই এলাকায় গোর খোদক ছিলাম।’

সফিউল্লাহ আরও বলেন, ‘৪০ বছরে হাজার দেড়েক মানুষের কবর খোঁড়ার ভাগ্য আমার হয়েছে। তবে আপন মানুষের শেষ ঠিকানা নিজের হাতে তৈরি করার মতো কষ্টের অনুভূতি হয়তো আর নেই। বাবা-মা, ভাই ও ফুপুর কবর খুঁড়তে গিয়ে নিজেকে সবচেয়ে বেশি নিষ্ঠুর মনে হয়েছে। কারণ আমি আমার আপন মানুষদের একটা অন্ধকার বিছানাহীন ঘরে রেখে এসেছিলাম। যেটা আমি নিজেই বানিয়েছি।’

সফিউল্লাহ মাঝেমধ্যে কবর খুঁড়তে গিয়ে ভয়ও পেয়েছেন। অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘একবার বাড়ির পাশে একটি কবর খুঁড়তে গেলে গোটা একটা মানুষের কঙ্কাল পেয়েছিলাম। যা আমার জীবনের এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা। যখন বর্ষায় কেউ মারা যায়, তখন কবরে পানি উঠে যায়। ওই পানিতেই ভাসমান অবস্থায় আমি অনেক লাশ রেখে এসেছিলাম। আবার অনেক সময় কবর খুঁড়তে খুঁড়তে বেরিয়ে আসে সাপ বা বিষাক্ত কোনো প্রাণী। আর আমার সবচেয়ে কষ্ট হয়, যখন শিশু বাচ্চাদের কবর খুঁড়ি। বুক ভারী হয়ে কান্না আসে। কাউকে এই কষ্ট বলা যায় না। শুধু মনে পড়ে, আমার কবর জানি কার হাতে হয়। এই চিন্তা থেকে অনেক যুবককে এই কাজে আগ্রহী করার চেষ্টা করছি।’

লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার অনেক আত্মীয়-স্বজনের কবর খুঁড়েছেন সফিউল্লাহ। তিনি অত্যন্ত ভালো মানুষ। উনি গরিব মানুষ, কিন্তু কবর করার জন্য কারও কাছ থেকে টাকা-পয়সা নেন না। জোর করে দিতে গেলেও রাগারাগি করেন। তাঁর জন্য সবাই দোয়া করেন।’

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ

ঢাকা সড়ক পরিবহন: প্রশ্নবিদ্ধ কমিটিতেই চলছে মালিক সমিতির কার্যক্রম

৪০ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি করবে টিসিবি

৮ বছরে শিশুহত্যা হয়েছে ৪০০০

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির শীর্ষে বাংলাদেশ, তবে বাজারে পিছিয়ে

দেশে ব্যবসায় ঘুষ–দুর্নীতিসহ ১৭ রকমের বাধা

বিদ্যালয়ের জমিতে ৩৯১টি দোকান, ভাড়া নেয় কলেজ

সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ প্রাণহানি

সেকশন