রংপুরের বদরগঞ্জে নানা অজুহাতে সার বিক্রি বন্ধ রাখছেন সরকারি ডিলাররা। তাঁরা বরাদ্দ না পাওয়া, সপ্তাহে কয়েক দিন বিক্রিতে বিরতি দেওয়া ও তদারকি কর্মকর্তা না আসার মতো কারণ দেখিয়ে কৃষকদের সার দিচ্ছেন না। তবে কৃষি বিভাগ দাবি করছে, উপজেলায় সারের কোনো সংকট নেই।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে গত শনিবার এমন দৃশ্যই দেখা গেছে। অনেক কৃষককে ডিলারের দোকান ঘুরেও সার না পেয়ে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। শনিবার উপজেলার লোহানীপাড়া ও কালুপাড়া ইউনিয়নে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) ডিলারের দোকান বন্ধ পাওয়া যায়। অন্যদিকে কুতুবপুর ও গোপালপুর ইউনিয়নে ডিলারের দোকান খোলা থাকলেও সার বিক্রি করা হয়নি।
গোপালপুর ইউনিয়নের শ্যামপুর বাজারে বেলা ১১টার দিকে ডিলার নীলু ব্যানার্জির দোকানে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কয়েকজন কৃষক সার নিতে এসেছেন। তাঁদের ডিলারের ব্যবস্থাপক দেলদার হোসেন বলেন, ‘কৃষি অফিস থেকে বিএস (তদারককারী উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা) আসেননি। বাড়ি যাও, আজ সার বিক্রি বন্ধ।’
এ সময় স্থানীয় কৃষক আনছার আলী বলেন, ‘শুক্রবার সার বিক্রি বন্ধ ছিল। আজ (শনিবার) বিএস আইসে নাই। তা হলে কি হামরা সার পাবার নাই?’ এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে কথা হলে ডিলার নীলু বলেন, ‘শুক্র ও শনিবার সার বিক্রি হয় না। ওপরের নির্দেশ আছে।’
দুপুর ১২টার দিকে কুতুবপুর ইউনিয়নের নাগেরহাটে গিয়ে দেখা যায় ডিলারের দোকানে বিক্রি বন্ধ। ডিলার শাহ নেওয়াজের ব্যবস্থাপক মনোরঞ্জন শীল বলেন, ‘ইউরিয়া সার পাশের গোডাউনে ৪১২ বস্তা মজুত রয়েছে। তবে ৫ সেপ্টেম্বরের পর থেকে বিক্রি বন্ধ রয়েছে। কৃষি অফিসের নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত (বস্তা হিসাবে) বিক্রি করতে পারছি না। কৃষি অফিস থেকে প্রতিদিন দুই বস্তা করে ইউরিয়া সার খুলে বিক্রি করার নির্দেশ পেয়েছি।’
নাম প্রকাশ না করে দুজন কৃষক অভিযোগ করেন, ডিলারের ব্যবস্থাপক সার গোপনে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেন।লোহানীপাড়া ইউনিয়নের মণ্ডলের হাটে বেলা ১টার দিকে ডিলার গোবিন্দ কুণ্ডুর দোকানে তালা ঝুলতে দেখা যায়। সেখানে কৃষক শাহ আলম বলেন, ‘ডিলার সকালে দোকানে সার নামিয়ে বদরগঞ্জ শহরে চলে গেছেন। তিনি শুক্র ও শনিবার সার বিক্রি করেন না।’
কালুপাড়া ইউনিয়নের কালা আমেরতল গ্রামে বেলা ২টার দিকে গেলে এলাকাবাসী জানান, সেখানকার ডিলার সুলতানা আখতার তাঁর ব্যবসা আলতাব হোসেনকে ছেড়ে দিয়েছেন। আলতাব ইচ্ছেমতো সার বিক্রি করেন।
গ্রামের বাসিন্দা শিউলী বেগম বলেন, ‘সকালে ১০ থেকে ১৫ কৃষক সার নিতে এসেছিলেন; কিন্তু দোকান বন্ধ থাকায় ফিরে যান।’ এদিকে বদরগঞ্জ পৌর শহরের চার খুচরা বিক্রেতা অভিযোগ করেন, ডিলাররা গুদামে মজুত করে সারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছেন। খুচরা বিক্রেতাদেরও তাঁরা সার দিচ্ছেন না।
যোগাযোগ করা হলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা মো. জোবাইদুর রহমান বলেন, ‘সারের কোনো সংকট নেই। কোনো ডিলারকে সার বিক্রি করতে নিষেধ করা হয়নি। যদি কেউ আমার অফিসের কথা বলে সার বিক্রি বন্ধ রাখেন তা হলে সেই ডিলারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে রংপুর কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল জানান, সার থাকলে প্রতিদিনই ডিলারদের বিক্রি করতে হবে। কোনো অজুহাতে বিক্রি বন্ধ রাখা যাবে না।