এক ফসলি জেলা সুনামগঞ্জ। জেলার ৭৮ শতাংশ মানুষই বোরো ফসলের ওপর নির্ভরশীল। চলতি মাসের শুরুতে কৃষকেরা বোরো চাষাবাদ শুরু করে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে গত তিন দিন ধরে সুনামগঞ্জে শুরু হয় বৃষ্টিপাত। সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির কারণে কৃষকেরা খেতে হালচাষ বা বীজতলা তৈরির কাজে যেতে পারছেন না। এতে বোরো আবাদ বিলম্বিত হওয়ার শঙ্কায় কৃষকেরা। আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রমতে, গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, বৃষ্টি উপেক্ষা করে কৃষকেরা বোরো আবাদের জন্য বীজতলা ও হালচাষে বের হন। আবার অনেক কৃষকেরা বৃষ্টির কারণে চাষের কাজে যেতে পারছেন না। এদিকে বৃষ্টির পাশাপাশি শীতের প্রকোপ থাকায় তাঁদের ভোগান্তি দ্বিগুণ বেড়ে যায়।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের শাফেলা গ্রামের কৃষক আজমল হোসেন বলেন, ‘এই সময় আমরা পুরোদমে হালচাষ শুরু করি। কিন্তু গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির কারণে ভোরে বাইর হইতে পারতাছি না।’
শীত বেশি থাকলেও আমরা কৃষি কাজ করতে পারি। কিন্তু বৃষ্টির কারণে হালচাষ করা কষ্টকর।
অন্যান্য বছরও এই সময় থেকে শুরু করে ফসল ওঠানো পর্যন্ত সময়ে শ্রমিক সংকট দেখা দেয়। এবারও হালচাষে শ্রমিক থাকলেও বৃষ্টির কারণে মাঠে কাজ করতে যেতে চাচ্ছেন না শ্রমিকেরা।’ বলেন সদর উপজেলারই বুড়িস্থল গ্রামের কৃষক আব্দুল বাতেন।
সদর উপজেলার নীলপুর গ্রামের কৃষক সোহেল মিয়া বলেন, ‘হাওরে আমার জমি বেশি। এখন হালচাষের সময়। কিন্তু বেশি টাকা দিয়েও শ্রমিকদের মাঠে নিতে পারছি না। বৃষ্টির কারণে শ্রমিকেরা কাজ করতে চাচ্ছেন না।’
অপরদিকে শীতকালীন সবজি চাষে কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এসব এলাকার কৃষকেরা। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তার বলছেন, বৃষ্টির জন্য সবজির ক্ষতি হবে না।
কৃষকেরা আগাম শাকসবজি হিসেবে ফুলকপি, বাঁধাকপি, লালশাক, পালংশাক, মুলা, শিম, টমেটো, লাউ, বেগুন ও কাঁচা মরিচসহ বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজির চাষাবাদ শুরু করেছেন। কদিনের বৃষ্টিতে জমির মাটি শুকাচ্ছে না। ফলে খেতের মধ্যেই কিছু শাক-সবজি চারা পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ জেলায় চলতি বছর ৩৬৫ হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২ লাখ ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে এই বৃষ্টিতে চাষাবাদের কোনো ক্ষতি হবে না বলে জানান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ফরিদুল হাসান। তিনি বলেন, এ বৃষ্টিতে চাষাবাদে ও বীজতলার কোনো ক্ষতি হবে না। যদি বৃষ্টির পরিমাণ (৩০-৪০ মিলিমিটার) বেড়ে যায় তাহলে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। নতুন সবজির জন্য এই বৃষ্টি উপকারে আসবে বলেও জানান তিনি।