দিন দিন বেড়েই চলেছে নিত্যপণ্যের দাম। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ভোজ্যতেলের দাম। কৃষকের উৎপাদিত ফসলের দাম কমলেও বাড়ছে আমদানি করা পণ্যের দাম। এতে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে উপজেলার মধ্যম ও নিম্ন আয়ের হাজারো খেটে খাওয়া মানুষকে।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমছে আর এই দেশে বাড়ছে। পাইকারি বাজারে দাম বেশি ধরায় খুচরা বাজারে বেশি দামে তেল বিক্রি করতে হচ্ছে।
ক্রেতারা বলছেন, প্রতিনিয়ত নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও আয়-রোজগার বাড়ছে না।
ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল রিফাইনার্স ও বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ৭ মে থেকে ভোজ্যতেলের নতুন দাম নির্ধারণ করে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৮০ টাকা, বোতলজাত তেল ১৯৮ এবং পাম সুপার ১৭২ টাকায় বিক্রি হবে মর্মে জানিয়েছিল। এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কিছুটা কমলেও দেশে আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার নতুন করে লিটারপ্রতি দাম ৫ থেকে ৭ টাকা বাড়ানো হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য অধিশাখার উপসচিব খন্দকার নূরুল হক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে দাম বাড়ানোর এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ২০০ টাকা, প্রতি কেজি ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাম সুপার বিক্রি হচ্ছে প্রতি লিটার ১৯০ টাকা এবং কেজি ২১০ টাকা। প্রতি লিটার বোতলজাত তেল বিক্রি হচ্ছে ২০৫ টাকা, ২ লিটার ৪১০ এবং ৫ লিটার ১ হাজার ২০ টাকায়। সরিষার তেল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়।
কালাই বাজারে ভোজ্যতেল কিনতে এসেছেন পৌরসভার আঁওড়া গ্রামের সামিউল ইসলাম (২৮)। তিনি বলেন, ‘যা রোজগার করি, তা বাজার করতে শেষ হয়ে যায়। আবার নতুন বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। এই বাজেট ধনীদের জন্য, গরিবের জন্য নয়।’
উপজেলার তালখুর গ্রামের কালাই পৌর বাজারে ভোজ্যতেল কিনতে আসা হাবিবুল হাসান (৩৫) আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যা রোজগার করি তা দিয়ে কোনোভাবে সংসার চলছিল। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় সংসার চালাতে নাভিশ্বাস উঠছে।’
কালাই পূর্বপাড়ার ভ্যানচালক আজাহার প্রধান (৫৫)। পরিবারে ৫ জন সদস্য। তাঁর আয়েই চলে সংসার। তিনি বলেন, ‘সারা দিনে কামাই করি ২০০-৩০০ টাকা। যা কামাই করি চাল-তেল কিনতেই শেষ। বাজার করবার আসলে দেখি সব জিনিসের দাম বেশি। সব জিনিসের দাম বাড়লেও হামাগেরে ভাড়া বাড়ে না। এখন ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়েছে।’
উপজেলার মেসার্স নাবহান ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মশিউর রহমান রুবেল বলেন, সরকার আমদানিকারক ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে জিম্মি। বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমছে আর বাংলাদেশে বাড়ছে। পাইকারি বাজারে দাম বেশি ধরায় খুচরা বাজারে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা টুকটুক তালুকদার বলেন, বাজার তদারকি অব্যাহত রয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেশি নেওয়া হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।