নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
এনামুল হক বিজয় চুপ হয়ে গেছেন। তিনি কোনো কথাই বলছেন না। তবে তাঁর ব্যাট উচ্চ স্বরে কথা বলছে। গত পরশু শেষ হওয়া ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ (ডিপিএল) যেভাবে রাঙিয়েছেন, একজন ব্যাটার এর চেয়ে আর ভালোভাবে কীভাবে রাঙাতে পারতেন!
প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে এবার ১৫ ম্যাচে করেছেন ১১৩৮ রান। গড় ৮১.২৮, স্ট্রাইকরেট ৯৮.৬১। ৩টি সেঞ্চুরি, ফিফটি ৯টি। সর্বশেষ পাঁচ ইনিংসের প্রতিটিই ৫০ পেরোনো, এর মধ্যে একটি অপরাজিত সেঞ্চুরিও আছে। তাঁর ‘১১৩৮’ প্রিমিয়ার লিগ ইতিহাসের সর্বোচ্চ রান তো বটেই, দুর্দান্ত বিজয় একটা বিশ্বরেকর্ডও করেছেন। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটের ইতিহাসে এক মৌসুমে তিনিই প্রথম ব্যাটার, যিনি হাজার রান পেরিয়েছেন। যাঁর ব্যাটে এমন ফোয়ারা ছুটেছে, তিনি মাঠের বাইরে এখন আশ্চর্য নির্লিপ্ত।
পুরো লিগে বিজয় থাকলেন ‘স্পিকটি নট মুডে’। তাঁর মুখে তালা দেখে অনেকেই অবাক। এই বিজয় আগে দারুণ খেলেছেন আর কথা বলেননি, এমন দৃশ্য দুর্লভ। সেই বিজয় একেবারে চুপ হয়ে গেলেন! কারণটা কী? লিগের শেষ দিকে যখন বিজয়ের সঙ্গে কথা হচ্ছিল, পাল্টা প্রশ্ন ছুড়লেন, ‘এটাই কি ভালো নয়?’
আসলে এত দিন যেভাবে নিজেকে চিনিয়ে আসছিলেন, সেখান থেকে সরে আসতে চাইছেন বিজয়। তাঁর উপলবব্ধি, এত দিন তিনি যেভাবে এগিয়েছেন, সংবাদমাধ্যমে কথা বলেছেন, এটি তাঁকে উপকারের চেয়ে ক্ষতিই করছে। বিজয় তাই মনে করছেন, কথা মুখে নয়, ব্যাট দিয়েই বলাতে হবে, ‘পারফর্ম করে বড় হয়েছি, পারফর্ম করেই এগোতে হবে। বেশি কথা বলে কী হবে? কথা না বললেই-বা কী হবে? ভালো খেলছি, সবাই আলোচনা করছে। এটাই থাকুক।’
আলোচনা হবে না কেন? এবারের প্রিমিয়ার লিগে বিজয়ের সঙ্গে বাকি ব্যাটারদের এতটাই পার্থক্য, আলোচনা হতে বাধ্য। পরশু বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা যেমন বলছিলেন, ‘একজন ৬০০-৭০০ রান করেছে, তার আশপাশে ৪০০-৫০০ রান করে আছে। আরেকজন হাজারের ওপর রান করেছে। এটা তো অনেক ব্যবধান। এই পার্থক্যটার মূল্যায়ন করা উচিত।’
ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে অতি উজ্জ্বল হলেও বিজয়ের একটা আফসোস থেকে গেছে। গত সপ্তাহে ১০০০ রান করার প্রতিক্রিয়ায় সেটি তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেনও, ‘দলকে শিরোপা জেতাব, এটাই চিন্তা করেছিলাম। সেটা হয়নি। এটার জন্য খারাপ লাগছে। চেষ্টা করব যখনই দলে খেলি, যেন অবদান রাখতে পারি। এটা (অবদান রাখতে) পেরেছি, তবে চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে আরও ভালো লাগত। আর এ রকম কোনো লক্ষ্য ছিল না যে ১০০০ রান করব।’
প্রিমিয়ার লিগে এক হাজার রানের লক্ষ্য না থাকলেও অসাধারণ কীর্তিটা বিজয়ের হয়েছে। কিন্তু যে লক্ষ্য নিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক ভালো করে যাচ্ছেন, সেটি কি দ্রুত পূরণ হবে? নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন বললেন, ‘সে আমাদের বিবেচনায় আছে। বিজয় শুধু যে বিপিএল, ডিপিএলে রান করছে, তা নয়, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সব সময়ই সে রান করে। এবার প্রিমিয়ার লিগে অসাধারণ খেলেছে। কেউ যখন এমন খেলে, তাকে তো বিবেচনায় রাখতেই হয়। তাকে নিয়ে চিন্তাভাবনা থাকে। সামনে আমাদের অনেক খেলা আছে। তিনটা সংস্করণ, “এ” দল আছে। তবে সে কোথায় সুযোগ পাবে, দেখা যাক।’বোঝাই যাচ্ছে, অসাধারণ খেলা বিজয়কে পুরস্কৃত করতে চাইছে নির্বাচক প্যানেল। ৩০-এর দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে এই টপঅর্ডার ব্যাটারও জাতীয় দলে ফিরতে যেকোনো চ্যালেঞ্জই নিতে প্রস্তুত। না হলে কী আর তিনি বলেন, ‘জাতীয় দলে অন্তত ১০ বছর খেলতে চাই।’