নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি হলে অযোগ্য লোক চাকরি পেয়ে যায় এবং সেই চাকরি টিকেও থাকে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কারণে—এ রকমই এক ঘটনার দেখা পাওয়া গেল পেট্রোবাংলায়। বাবা যখন পেট্রোবাংলার মহাব্যবস্থাপক, তখন যোগ্যতা না থাকলেও ছেলেকে ওই প্রতিষ্ঠানের সহকারী ব্যবস্থাপক পদে নিয়োগ দিয়ে এই অকাণ্ড ঘটানো হয়। কাজটি নিশ্চয়ই সম্পন্ন হয়েছে তাদের দ্বারাই, যারা যেকোনো প্রতিষ্ঠানে তেলবাজির মাধ্যমে নিজের অবস্থান শক্ত রাখে। এরাই জাতির সর্বনাশ করে।
আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের শিরোনাম ছিল ‘জাল সনদে নিয়োগ-পদোন্নতি বহাল’। পেট্রোবাংলায় সহকারী ব্যবস্থাপক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলে ছেলে মহিউদ্দিন চৌধুরী ওই পদে আবেদন করে চাকরি পেয়ে যান বাবা মহাব্যবস্থাপকের কল্যাণে। ২০১১ সালে মহিউদ্দিন চৌধুরী যখন নিয়োগ পান, তখন তাঁর বাবা আইয়ুব
খান চৌধুরী পেট্রোবাংলার মহাব্যবস্থাপক ছিলেন। বাবার ক্ষমতার কারণে ছেলের জালিয়াতির বিষয়ে জেনেও চুপ ছিলেন পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা। পরে এ ঘটনায় ২০২১ সালে পেট্রোবাংলার তদন্ত কমিটি সাত পৃষ্ঠার গোপনীয় প্রতিবেদন জমা দেয়। এতেও তাঁর সনদে স্নাতকে দুই রকম সিজিপিএর নম্বরে গাফিলতি ধরা পড়েছে।
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও কী করে মহিউদ্দিন চৌধুরী চাকরি পেয়ে গেলেন, তা নিশ্চয়ই এখন কাউকে বুঝিয়ে বলতে হবে না। কিন্তু একটি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগকারীদের কি একেবারেই মেরুদণ্ড থাকা নিষেধ? কর্তার ইচ্ছায়ই যদি কর্ম করতে হয়, তাহলে তো অযোগ্য লোকে ভরে যাবে প্রতিষ্ঠান। যাঁরা নিয়োগ বোর্ডে থাকেন, তাঁরা কি নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তির শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ যাচাই-বাছাই করে দেখেন না? যদি দেখে থাকেন, তাহলে মহিউদ্দিন চৌধুরী কীভাবে নিয়োগ পেলেন? খতিয়ে দেখতে হবে, কারা নিয়োগ বোর্ডে ছিলেন। তাঁদেরও তো আনতে হবে জবাবদিহির আওতায়। তদন্ত করলেই প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন করা যাবে।
আমাদের দেশে অর্থ ও পেশিশক্তির বলে নিয়োগের ক্ষেত্রে অসাধ্য সাধন করা যায় বলে যে অভিযোগ রয়েছে, তার সবগুলো মিথ্যে নয়। আর যদি কেউ এভাবে নিয়োগ পেয়ে
থাকেন, তাহলে তাঁকে সরানো যে কঠিন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
তাই নিয়ম-নীতি ও সততার যথাযথ প্রয়োগ ছাড়া এসব থেকে বের হয়ে আসা অসম্ভব।
কোনো প্রতিষ্ঠানে অবৈধ ও অসততার মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেলে সেখানে সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃত ঘটনা তদন্ত করে অপরাধীদের আইন অনুযায়ী বিচারের আওতায় আনতে হবে। সেই সঙ্গে সৎ, মেধাবী ও যোগ্যদের নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধ করা যাবে না। তা ছাড়া, নিয়োগসংক্রান্ত বিষয়গুলোয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্মোহ নজরদারি ও তদারকি থাকা জরুরি। দেশে আইন ও বিচারব্যবস্থাকে যথাযথ সম্মান করে অনিয়মের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ায় শাস্তির ব্যবস্থা করা জরুরি। কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া ঠিক হবে না।