রানা আব্বাস, ঢাকা
বাংলাদেশের পেস বোলিংয়ে গত তিন বছরে একটা বড় পরিবর্তন এসেছে। এই অগ্রযাত্রায় সর্বশেষ সংযোজন, দেশের চিরচেনা মন্থর-ঘূর্ণি উইকেটেও অসাধারণ বোলিং। এতে বড় কৃতিত্ব পাবেন পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড।
অসাধারণ পারফরম্যান্সের পর ডোনাল্ডের মুখে যে তৃপ্তির আভা, গতকাল তাঁর হোয়াটসঅ্যাপ বার্তাই পরিষ্কার, ‘আমরা সবকিছু নিয়েই অনেক কাজ করেছি। সেসব কাজের প্রায় সবটাই সাদা বলে বোলিংয়ের বুদ্ধিমত্তা নিয়ে। এই বিভাগে আমাদের পেসাররা যেভাবে গড়ে উঠছে, অনেক গর্বিত। এখন এটির ফল মিলছে।’
ডোনাল্ড যে বুদ্ধিমত্তা বা ইন্টেলিজেন্সের কথা বলছিলেন, এটি তিনি বলছিলেন গত মাসে বিপিএল চলার সময়ও। বিপিএলের শুরু আর মাঝামাঝি সময়ে খুব একটা ভালো করতে পারছিলেন না বাংলাদেশের পেসাররা। দক্ষিণ আফ্রিকায় ছুটি কাটানোর সময় ডোনাল্ডের সামনে বিষয়টি পাড়তেই হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় বলছিলেন, ‘ভালো না করার পেছনে বড় কারণ তীব্র চাপে গেম স্মার্টনেসের অভাব। টি-টোয়েন্টির এই মাইন্ডসেট আর সচেতনতা তৈরিতে যা যা করা দরকার, সে সব করাই হচ্ছে আমাদের এখনকার প্রকল্প।’
ডোনাল্ডের ‘প্রকল্প’ যে ভালোভাবেই এগোচ্ছে, সে সর্বশেষ ইংল্যান্ড সিরিজেই দেখা গেল। সব বিভাগে ভালো করা বাংলাদেশের পেস বোলিং বিভাগটা আলাদা প্রশংসা পাচ্ছে সে কারণেই। ২০ ওভারের ক্রিকেটে ডেথ ওভারের বোলিং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। স্কোর বড় করতে সব দলের ব্যাটারেরই ভাবনা থাকে শেষ ৪ ওভারে ঝড় তুলতে। যদি উইকেটে থাকেন থিতু ব্যাটার, তাহলে তো কথাই নেই। এখানে এবার ‘এ প্লাস’ পেয়ে উত্তীর্ণ বাংলাদেশের পেসাররা। তিন ম্যাচেই ডেথ ওভারে যে ইকোনমি রেট ছয়ের নিচে রাখা গেছে, তাতে বড় অবদান তাসকিন-হাসান-মোস্তাফিজদের।
ঘরের মাঠে দুর্দান্ত বোলিংয়ে হাবিবুল বাশার সুমন সবচেয়ে বেশি কৃতিত্ব দিচ্ছেন তাসকিন আহমেদকে। বিসিবির এই নির্বাচক গতকাল আজকের পত্রিকাকে বললেন, ‘আমার মতে, তাসকিন সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। বছরের পর বছর মোস্তাফিজ তো পারফর্ম করছে। এবার বোলিংয়ে উইকেট শিকারে তাসকিন দুর্দান্ত। বোলিংয়ে একটা হচ্ছে রক্ষণাত্মক বোলিং করে উইকেট নেওয়া আর আক্রমণাত্মক বোলিং করে উইকেট নেওয়া। তাসকিন এখানে নেতৃত্ব দিয়েছে।’
মুগ্ধ করেছেন তরুণ পেসার হাসান মাহমুদও। চট্টগ্রাম সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ডেথ ওভারে হাসান যে বোলিংটা করেছিলেন, ওখানেই যেন ম্যাচের মোড় ঘুরে গেছে। বড় স্কোরের দিকে এগোতে থাকা ইংলিশরা পরে মাঝারি স্কোরে সন্তুষ্ট থেকেছে হাসানের দুর্দান্ত বোলিংয়ের কাছে আত্মসমর্পণ করে।
গত কয়েক দিনে অনেক কথা হচ্ছিল মোস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে। ছন্দ হারিয়ে ফেলা বাঁহাতি পেসার নিজেকে ফিরে পেয়েছেন মিরপুরে সিরিজের শেষ ম্যাচে। ৪ ওভারে ১৪ রানে নিয়েছেন ১ উইকেট। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ও বিশ্বের ষষ্ঠ বোলার হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১০০তম উইকেট পেয়েছেন মোস্তাফিজ। ১০০তম উইকেটের চেয়ে মোস্তাফিজের তৃপ্তি ছন্দ ফিরে পাওয়ায়। তিনি বলছিলেন, ‘বোলিং খুব যে একেবারে খারাপ করছিলাম, তা নয়; শুধু উইকেট পাচ্ছিলাম না। সব সময়ই এক রকম যায় না। সাফল্যের হার বাড়ে নতুন বল আর শেষের দিকে, বিশেষ করে ওয়ানডেতে। দল যখন যেভাবে চেয়েছে, সেভাবেই করার চেষ্টা করেছি।’
ইংল্যান্ড সিরিজ শেষে মাত্র এক দিনের বিরতির পর সাফল্যের নতুন গল্প লিখতে আজ তাসকিন-মোস্তাফিজরা যাচ্ছেন সিলেটে।