এলাকায় প্রভাব বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরেই খুন হন কানাইঘাট উপজেলার ফরিদ উদ্দিন। মামলার পরিকল্পনাকারী ও প্রধান আসামি লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ইউপি সদস্য নাজিম উদ্দিনের সঙ্গে আগে থেকেই তাঁর দ্বন্দ্ব ছিল। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নাজিম উদ্দিন জয়ী হওয়াই দ্বন্দ্ব বেড়ে যায়। আর এর জেরেই প্রাণ দিতে হয় ফরিদ উদ্দিনকে।
র্যাব-৯-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ আবদুর রহমান এ তথ্য জানান। গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে ফরিদ উদ্দিন হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন ও তিন আসামিকে গ্রেপ্তারের দাবিও করেন তিনি।
র্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, নিহত ফরিদ উদ্দিন ও ইউপি সদস্য নাজিম উদ্দিন পাশাপাশি গ্রামের বাসিন্দা এবং নিকটাত্মীয়। এলাকায় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে তাঁদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। এক পক্ষে নেতৃত্ব দেন নিহত ফরিদ ও তাঁর শ্যালক কয়েছ উদ্দিন ওরফে কয়ছুর আহমদ এবং আরেক পক্ষে নেতৃত্ব দেন লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ইউপি নির্বাচনে জয়ী সদস্য নাজিম উদ্দিন ও তাঁর ভাই হেলাল আহমদ।
এই দুই পক্ষের বিবাদের কারণে এলাকার মানুষ সব সময় আতঙ্কে থাকত। সর্বশেষ নাজিম গ্রুপের নেতৃত্বদানকারী নাজিম ইউপি সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় এলাকায় নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এরই জেরে ফরিদ উদ্দিন খুন হন।
গত সোমবার কানাইঘাট উপজেলার লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের বড়খেওড় এলাকায় দুর্বৃত্তদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হন ফরিদ উদ্দিন নামের ওই যুবক। ময়নাতদন্ত শেষে পরদিন সন্ধ্যায় তাঁর লাশ দাফন করা হয়। ফরিদ উদ্দিন কানাইঘাট উপজেলার খাসাড়ীপাড়া গ্রামের রফিক উদ্দিনের ছেলে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা কানাইঘাট থানায় সাতজনের নাম উল্লেখ করে গত বুধবার হত্যা মামলা করেন।
চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের চার দিনের মাথায় রহস্য উদ্ঘাটন করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৯। পাশাপাশি সিলেটের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে মূল অভিযুক্ত নাজিমসহ তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-নাজিম উদ্দিন, কাওছার আহমদ ও মোস্তাক আহমদ।
র্যাব জানায়, হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদ্ঘাটন ও আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য র্যাব-৯ গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাবের গোয়েন্দা তথ্য ও বিভিন্ন সূত্র মারফত জানা গেছে, এ হত্যার মূল অভিযুক্ত নাজিম উদ্দিন মৌলভীবাজার জেলায় আত্মগোপনে রয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল শুক্রবার ভোর পর্যন্ত র্যাব-৯ এর একটি দল মৌলভীবাজারের শেরপুর থেকে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী নাজিম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কাওছার আহমদকে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা ও মোস্তাক আহমদকে নগরীর বন্দরবাজার থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ আবদুর রহমান বলেন, নাজিম স্থানীয় ইউপি নির্বাচনে সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই এলাকায় নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। নাজিম গ্রুপ ভিকটিম ফরিদকে নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিতে থাকে। ঘটনার দুদিন আগে এ নিয়ে ভিকটিম ফরিদ তাঁর ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। যেখানে মেম্বার নাজিমের ভাই এনাম ফরিদকে শায়েস্তা করার হুমকি দিয়ে কমেন্ট করেন। ফরিদের ফেসবুক স্ট্যাটাসে এনামের কমেন্ট নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলতে থাকে এবং দুদিন পরই ফরিদ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।
তিনি আরও জানান, ফরিদ উদ্দিন ঘটনার দিন একজনকে সঙ্গে নিয়ে বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। এফআইভিডিবি স্কুলের সামনে পৌঁছালে পাশের টিলা থেকে দেশি অস্ত্র হাতে দুজন মুখোশধারী তাঁর ওপর হামলা চালায়। এ সময় দুর্বৃত্তরা ফরিদের একটি পা কেটে নিয়ে পালিয়ে যায়। দুই পায়ে এলোপাতাড়িভাবে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করার ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই ফরিদ মারা যান।