মাত্র তিন দিনের সময় বেঁধে দিয়ে আগামী বৃহস্পতিবার ভোট গ্রহণ হচ্ছে বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার অশান্ত জনপদ উলানিয়ার দুটি ইউনিয়ন পরিষদে। গত রোববার শেষ বিকেলে নির্বাচন কমিশনের এ সিদ্ধান্ত জানার পরই দুই উলানিয়ায় প্রচার শুরু হয়েছে। সহিংসতাপূর্ণ এ নির্বাচনী এলাকায় অবশ্য প্রথম দিনই মাঠ দখল করে নিয়েছেন নৌকার প্রার্থীরা। নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন, আচরণবিধি লঙ্ঘন করে গতকাল সোমবার স্কুল মাঠে জনসভা করেছেন নৌকার প্রার্থীরা।
বহিরাগতদের ঘেরা এ সমাবেশে স্থানীয় সাংসদকে ইঙ্গিত করে অশালীন বক্তব্য দেওয়া হয়। ভয়ে বিদ্রোহীরা নির্বাচনী মাঠেই নামতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন। এদিকে মাত্র তিন দিনের মাথায় ভোট হওয়ায় জেলে অধ্যুষিত এলাকার ভোটারদের সাগর থেকে ফিরে ভোট দিতে পারা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
নৌকার সমর্থক ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থকদের লাগাতার সংঘর্ষের মুখে ২০২০ সালের ৬ ডিসেম্বর উত্তর ও দক্ষিণ উলানিয়ার নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন স্থগিত হলেও উলানিয়ায় দুই পক্ষের সহিংসতা থামেনি। এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন চারজন। এক পক্ষে স্থানীয় সাংসদ পংকজ নাথ অনুসারী অপর অংশ জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষে।
জানা গেছে, নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা সোমবার লঞ্চে করে ঢাকা থেকে উলানিয়াতে পৌঁছান। মেহেন্দীগঞ্জের সন্তান ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম মুরাদসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে গতকাল সোমবার উত্তর উলানিয়ার করোনেশন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে নৌকার প্রার্থী উত্তরের জামাল হোসেন মোল্লা ও দক্ষিণের মিলন চৌধুরীর পক্ষে সমাবেশ করেন। ওই সমাবেশ একপর্যায়ে জনসভায় পরিণত হয়।
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপসম্পাদক সৈয়দ মনির বলেন, কেন্দ্রীয় নেতারা জেলা নেতাদের সঙ্গে নিয়ে নৌকা প্রতীকের সমর্থনে ভোট চেয়ে একাধিক পথসভা ও গণসংযোগ করছেন।
উত্তর উলানিয়ার বিদ্রোহী প্রার্থী মিঠু চৌধুরী বলেন, ‘উলানিয়ার ভোটারদের বড় অংশ পেশায় জেলে। তাঁরা সাগরে মাছ ধরতে গেছেন। ফিরতে কমপক্ষে ১৫ দিন সময় লাগবে। তাঁদের ভোট কী করে নিশ্চিত হবে।’ মিঠু চৌধুরী দাবি করেন, তাঁর লোকজনকে নৌকার সমর্থকেরা হুমকি-ধমকি দেওয়ায় ভয়ে কেউ বের হচ্ছেন না। সোমবার নৌকার প্রার্থী স্কুল মাঠে সমাবেশ করে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন।
উত্তরের চেয়ারম্যান প্রার্থী জামাল হোসেন মোল্লা বলেন, নির্বাচনী পথসভায় কোনো বক্তা সাংসদ পংকজ নাথের নাম উল্লেখ করেননি। তবে আকারে-ইঙ্গিতে সাংসদের জুলুম-অত্যাচারের বর্ণনা করেছেন। আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগও অস্বীকার করেন জামাল মোল্লা।
স্থানীয় সাংসদ পংকজ নাথের সমর্থক উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম ভুলু অভিযোগ করেন, গতকাল নৌকার প্রার্থীর পক্ষে মোটরসাইকেল মহড়া দিয়ে ভোটারদের মধ্যে ভীতি ছড়ানো হচ্ছে। পথসভার নামে স্থানীয় সাংসদ পংকজ নাথকে নিয়ে অশালীন ভাষায় সমালোচনা করা হয়।
মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাচনী আইনশৃঙ্খলা সমন্বয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মো. নুরুন্নবী জানান, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সমাবেশ হয়েছে এমন অভিযোগ তিনি শুনেছেন। ওখানে ওসি আছেন, তাঁকে বলবেন ব্যবস্থা নিতে।