একটা ছেলে কিংবা মেয়ের কিশোর বয়সের পরিবর্তনগুলো সমাজ সহজেই মেনে নেয়। কিন্তু সেই পরিবর্তন একটু অন্যরকম হলেই মেনে নেয় না। আমার মনের পরিবর্তনগুলোকে আমি ঘরবন্দী করে রাখতে পারতাম। কিন্তু আমার দৈহিক পরিবর্তনকে কীভাবে ঘরবন্দী করব? কথাগুলো বলছিলেন নুরুল আমিন নামে তৃতীয় লিঙ্গের একজন। যিনি ধীরে ধীরে নুরুল আমিন থেকে হয়ে উঠেছেন নুরী।
নুরুল কিংবা নুরী পরিচয়ের বাইরে একজন মানুষ হিসেবে পরিচিত হতে চান তিনি। তাইতো ২০১৮ সালের এক দিন ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েন। এরপর খোঁজ পান উত্তরণ ফাউন্ডেশনের। প্রতিষ্ঠানটি তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মের সংস্থান করে। তিনি ছয় মাসের প্রশিক্ষণ নেন উত্তরণে। শেখেন খাবার বানানো ও সুন্দরভাবে পরিবেশনের কৌশল। এরপর একটি রেস্টুরেন্টে কাজও করেছেন। এবার উত্তরণ পরিচালিত একটি স্ট্রিট ফুড কোর্টের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাঁকে।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে শ্যামলী শিশুমেলার সামনে স্ট্রিট ফুড কোর্ট উদ্বোধন করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হবে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের দ্বারা। এর মূল দায়িত্বে আছেন নুরী। পুলিশের উপমহাপরিচালক হাবিবুর রহমানের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত উত্তরণ ফাউন্ডেশন বেদে ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের পুনর্বাসনে কাজ করছে বলে জানান রমজান আহমেদ নামে একজন পরিচালক। তিনি জানান, উত্তরণ ফাউন্ডেশন দেশের বিভিন্ন জায়গায় এসব মানুষের জন্য ৩০টি বিউটি পারলার করেছে। ঢাকায় ছয়টি বিউটি পারলার ও চারটি স্ট্রিট ফুড কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে।
নুরুল আমিন ওরফে নুরী বলেন, ‘কিশোর বয়সে শারীরিক পরিবর্তন দেখা দিলে বাবা-মা চাইতেন আমি বাসার বাইরে না যাই। কিন্তু আমি চেয়েছি নিজের পায়ে দাঁড়াতে, নিজের পরিচয়ে বাঁচতে। তাই ২০১৮ সালে বাড়ি থেকে বের হই। এরপর খোঁজ পাই উত্তরণের। সেখানে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। আর আজ স্ট্রিট ফুড কোর্টে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আমাকে। এতে আমি খুব খুশি।’
উত্তরণ ফাউন্ডেশনের মার্কেটিং ডিরেক্টর ড. এ বি এম আসিফ কিবরিয়া বলেন, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে আমরা সহজে মেনে নেই না। শিশুরা এদের দেখে ভয় পায়। তাই শিশুরা দেখুক, শিশুমেলায় ঢোকার আগে তৃতীয় লিঙ্গের একটা মানুষ স্বাভাবিক মানুষের মতো কাজ করছেন। অন্য বিক্রেতার মতো তাঁরাও খাবার বিক্রি করেন। এতে সমাজে এই মানুষগুলোর গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। সবাই তাঁদের স্বাভাবিক চোখে দেখবে।
স্ট্রিট ফুড কোর্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসেছিলেন উত্তরণ ফাউন্ডেশনে প্রশিক্ষণ নেওয়া সোহাগী। তিনি এখন দুটি বিউটি পারলার চালাচ্ছেন। প্রায় ৪০ জনকে প্রশিক্ষণও দিয়েছেন। সোহাগী বললেন, আমরা চাই সমাজ আমাদের স্বাভাবিক বলে মেনে নিক।