ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় কাউন্সিলরের ছেলে সারওয়ার রহমান শান্ত ওরফে শান্ত রহমান (১৭) খুন হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত বুধবার রাত ৯টার দিকে পৌর শহরের নতুনবাজার এলাকায় প্রতিমা বিসর্জন চলার সময় এ ঘটনা ঘটে। শান্ত রহমান মুক্তাগাছা পৌরসভার কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আজিজা রহমান দম্পতির দ্বিতীয় ছেলে। সে এ বছর স্থানীয় নবারুণ বিদ্যানিকেতন থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, শান্ত তার বন্ধুদের সঙ্গে দুর্গোৎসবের আনন্দ-ফুর্তিতে যোগ দিতে গত বুধবার বিকেলে আয়মান নদীতে প্রতিমা বিসর্জন ঘাট এলাকায় যায়। সেখানে দুর্বৃত্তরা তাকে ছুরিকাঘাত করলে স্থানীয়রা তাকে দ্রুত উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
কিশোর খুনের ঘটনাটি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নানান মন্তব্য করে পোস্ট দেন নেটিজেনরা। কেউ কেউ উল্লেখ করেন সাম্প্রতিক সময়ে মুক্তাগাছাজুড়ে মাদকের ভয়াবহ ছোবলের কুপ্রভাব হিসেবে এমন ঘটনা ঘটেছে। কেউ কেউ লিখেছেন, কিশোরগ্যাং দ্বারা এই হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
তবে পুলিশ বলছে, কিশোরগ্যাং বলতে এখানে তেমন কোনো কিছুর অস্তিত্ব নেই। মাদকের কারণে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে পুলিশ বেশ কিছু ক্লু নিয়ে কাজ করছে বলে দাবি মুক্তাগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসানের।
নিহতের বাবা পৌর কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি বলেন, ‘আমার ছেলে স্বাভাবিক ছিল। কয়েকদিন ধরে চোখ ওঠা রোগ হওয়ায় শান্ত সারাদিন বাসায় থাকত।
বিকেলে তার কয়েক বন্ধুর অনুরোধে সে বাসা থেকে বের হয়ে প্রতিমা বিসর্জন দেখতে যায়। পরে রাতে খবর পাই তাকে কে বা কারা ছুরি মেরে খুন করেছে। আমি পাগলের মতো ছুটে গিয়ে হাসপাতালে ছেলের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখি।’ যে বন্ধুরা তাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায় তাদের সম্পর্কে তিনি তেমন কিছু জানতে পারেননি।
পৌর শহরের কাউনডাঙ্গার চর এলাকায় গতকাল সন্ধ্যায় ময়নাতদন্ত শেষে শান্তর লাশ বাসায় আনা হলে এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। শান্তর মা আজিজা রহমান ছেলেকে হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। সে সময় বারবার ছেলে হত্যার বিচার দাবি করেন তিনি।
সারওয়ার রহমান শান্তর মা উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আজিজা রহমান বলেন, ‘আমার ছেলে অসুস্থ থাকায় কয়েকদিন ধরে বাসায় ছিল। পূজা দেখার জন্য বন্ধুদের সঙ্গে সে গিয়েছিল। রাতে খবর পাই আমার ছেলে মারা গেছে।’
মুক্তাগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করে দায়ীদের গ্রেপ্তার করতে মুক্তাগাছা থানা-পুলিশের পাশাপাশি ডিবি পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করা হয়েছে উল্লেখ করে ওসি আরও বলেন, রহস্য উদ্ঘাটনে শান্ত যাদের সঙ্গে চলাচল করত তেমন আরও কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রক্রিয়া চলছে। দ্রুতই রহস্য উদ্ঘাটন সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) শাহিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে গেছি। আলামত হিসেবে ব্যাগ, ফোন ও হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে পুলিশের একাধিক টিমের সমন্বয়ে কাজ চলছে। সঠিকভাবে এ মুহূর্তে কিছু বলতে চাচ্ছি না আরও একটু সময় লাগবে।’