মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
শিল্পাঞ্চলের জন্য চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকার ২৬ হাজার একর সংরক্ষিত বন উজাড় হওয়ায় খাদ্য ও পানির সংকটে লোকালয়ে ছুটে আসছে মায়া হরিণ। ফলে প্রায় দুর্ঘটনা ঘটছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে মিরসরাই উপজেলার সাহেরখালী ইউনিয়নের মঘাদিয়া ঘোনা এলাকায় উপকূলীয় বেড়িবাঁধে গাড়িচাপায় দুটি হরিণ মারা যায়। মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে পণ্য সরবরাহের কাজে নিয়োজিত গাড়ির চাপায় হরিণ দুটির মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত শুক্রবার দুপুরে হরিণ দুটি উদ্ধার করে মাটিচাপা দেন বন বিভাগের মিরসরাই উপকূলীয় রেঞ্জের কর্মকর্তারা।
গত শুক্রবার সন্ধ্যায় জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরের মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজের জন্য উপকূলীয় ২৬ হাজার একর ম্যানগ্রোভ বন অধিগ্রহণ করে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। এর দুই-তৃতীয়াংশ বন ইতিমধ্যে কেটে ফেলা হয়েছে। যেখানে প্রায় ১ হাজার ৫ মায়া হরিণ রয়েছে। বনভূমি ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে হরিণগুলো। এ ছাড়া খাদ্য ও মিঠা পানির সংকট প্রকট হয়েছে। এতে হরিণগুলো বনাঞ্চল ছেড়ে লোকালয়ে এসে দুর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছে।
উপকূলীয় বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল গফুর মোল্লা জানান, উপকূলীয় প্রায় ২৬ হাজার একর ম্যানগ্রোভ বন বেজা অধিগ্রহণ করে ফেলেছে। এর দুই-তৃতীয়াংশ ইতিমধ্যে কেটে ফেলা হয়েছে। বেড়িবাঁধের সড়কটি দিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্মাণকাজে ব্যবহৃত যান চলাচল করে। এসবের চাপায় পিষ্ট হয়ে হরিণ মারা যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সর্বশেষ মারা যাওয়া হরিণ দুটি স্ত্রী হরিণ। বয়স আনুমানিক বয়স ১০ বছর। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে উদ্ধারের পর মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
সাহেরখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কামরুল হায়দার চৌধুরী জানান, দুটি হরিণ উপকূলীয় বন থেকে রাতের বেলা রাস্তা পার হওয়ার সময় গাড়িচাপায় মারা গেছে। পরে উপকূলীয় বন বিভাগের কর্মকর্তারা খবর পেয়ে উদ্ধার করে হরিণ দুটি নিয়ে যান। বনের জীবজন্তু বিপন্ন হওয়ার ফলে পরিবেশে বিরূপ প্রভাব পড়বে। এসব বন্যপ্রাণী রক্ষার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) চট্টগ্রামের সমন্বয়ক এ এস এম জিয়াউর রহমান বলেন, ‘এত বড় বন সম্পূর্ণ উজাড় না করে বন্যপ্রাণী রক্ষার জন্য নির্দিষ্ট অভয়ারণ্য অক্ষত রাখা প্রয়োজন ছিল। অপরিকল্পিতভাবে জীবজন্তু বিলুপ্ত করে শিল্পায়ন হলে এর কুফল সবাইকে ভোগ করতে হবে।’