দেবিদ্বার (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
কুমিল্লার দেবিদ্বারের গোমতী নদীর চরে ২০ বছর ধরে শসা চাষ করছেন বারেরার চর গ্রামের কৃষক ওয়াদুধ মিয়া। কয়েক বছর ধরে শসার ভালো ফলন ও মূল্য না পাওয়ায় লোকসান গুনতে হয়েছে। তবে এ বছর ভাগ্য খুলেছে। ৫০ শতাংশ জমিতে ৩০-৩৫ হাজার টাকা খরচ করে দুই লাখ টাকা আয় করেছেন তিনি। তবে বেশ খাটাখাটুনিও করতে হয়েছে। খেতে ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে রাত-দিন পাহারা দেওয়া, পোকামাকড়ের ওষুধ ছিটানো, জমিতে পানি দেওয়া, পাইকারদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হয়।
জানা গেছে, কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার বারেরার চর, লক্ষ্মীপুর, খলিলপুরসহ আশপাশের কয়েকটি এলাকার প্রায় ২০০ একর জমিতে প্রতিবছর শসা চাষ করেন স্থানীয় চাষিরা। অন্য বছরের চেয়ে এ বছর শসার ফলন ভালো হওয়ায় খুশি তাঁরা। সরেজমিনে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ গোমতীর চরে ঘেরের পাড়ে সারি সারি মাচায় শসা ঝুলছে। কেউ জমিতে ওষুধ ছিটাচ্ছেন। জমিতে ঘর বানিয়ে শসা পাহারা দিচ্ছেন। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া ভালো থাকায় ও জমি চাষের উপযোগী হওয়ায় শসার ফলনও ভালো হয়েছে।
ভালো ফলনের পাশাপাশি বাজারে দাম ভালো থাকায় লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গোমতীর চরে প্রায় ২০০ একর জমিতে শসা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ধনেপাতা, লালশাক, ঝিঙেসহ বিভিন্ন শীতকালীন সবজি চাষ হয়।
চরের ফসল উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। তবে কুমিল্লার নিমসার বাজারে চরের ফসল বেশি বিক্রি হয়।
চাষি ওয়াদুধ মিয়া বলেন, প্রতিবছর গোমতীর চরে শসা চাষ করেন। এ বছরই বেশি লাভবান হয়েছেন। শুধু তিনি একা না, চরে প্রায় ২০০ একর জমিতে শসা চাষ হয়, সবাই লাভবান হয়েছেন। অন্য বছরের চেয়ে এবার ফলনও ভালো হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় না হলে আরও বেশি ফলন হতো। তবে সারের দাম অনেক বেশি। সরকারিভাবে সুবিধা পাননি, একটু সহযোগিতা পেলে গোমতীর চরের সব জমিতে শসা হতো।
একই চরে শসা চাষ করেন আবু মিয়া। তিনি বলেন, তিনি খুচরা বাজারে ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে শসা বিক্রি করেন। প্রতিদিন সকালে আড়তে শসা নিয়ে যান। পাইকারেরা জমি থেকে শসা বিক্রি করতে অনেক চাপাচাপি করেন, তাঁদের কাছে বিক্রি করলে দাম কম পান। অনেক চাষি পরিবহন খরচ বাঁচাতে জমি থেকেই শসা বিক্রি করে দেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবদুর রউফ বলেন, চলতি বছরে গোমতীতে বন্যার কারণে পলিমাটি জমেছে। এ জন্য জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। চাষও ভালো হয়েছে।
আগের বছরগুলোতে মাটির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পাওয়ায় ফলন ভালো হয়নি। তবে এবার কৃষকেরা লাভবান হয়েছেন। উপজেলা কৃষি বিভাগ চরের কৃষকদের বিভিন্ন সহায়তার পাশাপাশি পরামর্শ দিচ্ছে।