ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে কোটচাঁদপুর যেতে মহাসড়কের ডানে পড়ে এলাঙ্গী গ্রাম। গ্রামের ভেতর দিয়ে প্রায় আধা কিলোমিটার যাওয়ার পর মহাসড়ক থেকে নামা সরু পাকা রাস্তাটি দুই ভাগ হয়ে গেছে। উত্তরে রাস্তাটি ধরে প্রায় আধা কিলোমিটার নির্জন পথ পেরোলে চোখে পড়ে কাঁটাতারঘেরা একটি বাংলো। আশপাশে আর কোনো বাড়ি নেই। এই বাংলো সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে অভিযুক্ত আক্তারুজ্জামান শাহীনের।
গত বুধবার বাংলো এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এলাঙ্গী থেকে চাঁদপাড়া যেতে রাস্তার পাশে খয়েরি রঙের বিশাল লোহার গেট। গেটের বাঁ পাশের খুঁটিতে সিসিটিভি ক্যামেরা। শুধু এখানেই নয়, বাংলোর চারপাশ ঘিরে রয়েছে বেশ কিছু সিসিটিভি ক্যামেরা। ভেতরে ঢুকতেই পাশে পড়ে আমবাগান। ভেতরের পাকা রাস্তা দিয়ে প্রায় ৩০০ গজ এগোলে দোতলা বাংলো।
এই বাড়ির বাঁ পাশের কোনায় রাস্তার পাশে ছোট তিনটি ঘর। তার সামনের ছাউনির নিচে রাখা একটি সাদা রংয়ের প্রাইভেট কার। বাংলোর ভেতরে রয়েছে পুকুর, গরুর খামার। কয়েকটি সূত্র বলেছে, সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরাসরি বাংলোর ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখতে পারেন আক্তারুজ্জামান শাহীন।
বাড়ির চারদিকে কাঁটাতারবেষ্টিত থাকায় ভেতরে ঢোকার উপায় নেই। গেটে কিংবা আশপাশে কাউকে দেখা যায়নি। বাইরেও দেখা মেলেনি কারও। তবে গেটের পাশে আমবাগানে বাঁধা রয়েছে তিনটি বিদেশি কুকুর। বাংলোর সামনে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর সাইকেলে করে একজনকে আসতে দেখা যায়। খাবার নিয়ে গেটে ডাকতে শুরু করেন ‘রাজ্জাক ভাই’ বলে। হাতে ঘাস কাটার যন্ত্র।
তাঁর ডাক শুনে গেট থেকে একটু দূরের ছোট দুটি ঘরের একটি থেকে বেরিয়ে আসেন প্রায় ৫০ বছর বয়সী একজন। তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁর নামই আবদুর রাজ্জাক। ৯ হাজার টাকা বেতনে এক বছর ধরে গেটের দারোয়ানের চাকরি করছেন তিনি। আর সাইকেলে আসা ব্যক্তিটির নাম সাজ্জাদ। বাংলোয় মালির কাজ করেন তিনি।
আবদুর রাজ্জাক জানালেন, বাড়ির মালিক শাহীন মিয়া। থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। মাঝেমধ্যে এ বাংলোয় আসেন। তখন বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে বিভিন্ন মানুষ আসে। অন্য সময় শাহীনের অনুমতি ছাড়া কেউ বাংলোয় ঢুকতে পারে না।
৬-৭ বছর আগে এলাঙ্গী গ্রামে প্রায় ৩০ বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলেন দোতলা এই বাংলো। যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে এসে এই বাড়িতেই থাকেন শাহীন। সে সময় নামীদামি গাড়িতে করে লোকজন আসেন। তবে কারা, কেন আসেন, তা নিয়ে স্পষ্ট কিছু বলতে পারেননি স্থানীয়রা।
এলাঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা সাজেদুল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মাঠে কাজ করার সময় মাঝেমধ্যে পানি খেতে গেটে ঢুকি। ভেতরে কী আছে, জানি না।’
এলাঙ্গী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গত বছর শাহীনের ভাই সেলিম মেয়র ওই বাড়িতে তাঁর মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান করেছিলেন। সেই দাওয়াতে গিয়েছিলাম। তবে ভেতরে গিয়ে কিছু দেখা হয়নি।’