আসছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট তৈরির কাজ এগিয়ে চলছে। কঠিন বৈশ্বিক পরিস্থিতির এক বিশেষ মুহূর্তে বাজেটটি দিতে যাচ্ছে সরকার। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবারে বাজেট দিতে হচ্ছে এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। ২০২০ সালের করোনা মহামারি থেকে ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে দেশের অর্থনীতি এখন চাপে আছে। চলমান মেগা প্রকল্পগুলোর অর্থসংস্থানে সরকার গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের ওপর ধীরে ধীরে ভর্তুকি প্রত্যাহার করছে। ভর্তুকি প্রত্যাহার করার চাপ এসে পড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে। দাম বেড়েছে সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের।
অন্যদিকে বিশ্ব অর্থনীতির গতি কমে যাওয়ায় ভোক্তারা আগের চেয়ে সাশ্রয়ী হয়ে উঠছে। বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক রপ্তানিতে এখনো ভাটা না পড়লেও এই খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, এপ্রিল-মে মাস থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হতে পারে। পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ বলছে, আসছে বাজেটে উৎসে কর, রপ্তানির ওপর দেওয়া প্রণোদনা টাকার ওপর কর ছাড় এবং রি-সাইকেল পণ্য রপ্তানিতে কর ছাড় না দিলে তৈরি পোশাক রপ্তানি আগামী দিনগুলোতে হোঁচট খেতে পারে।
বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘করোনা মহামারির ধাক্কা সামলাতে না সামলাতে ঘাড়ে এসে পড়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। ইউরোপের এই যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে শুরু হয়েছে মন্দাভাব। এর পরোক্ষ প্রভাব এসে পড়েছে তৈরি পোশাক খাতে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আমরা সরকারের কাছে উৎসে কর কমিয়ে শূন্য দশমিক ৫ করার পাশাপাশি প্রণোদনা টাকার ওপর ধার্য করা কর প্রত্যাহারের দাবি জানাই।’
রপ্তানির ক্ষেত্রে দেওয়া প্রণোদনার টাকার ওপর আরোপিত কর নিয়ে আপত্তি আছে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের। তাঁদের মতে, রপ্তানি করার সময় সরকার একবার মোট রপ্তানি পরিমাণের ওপর প্রথমে কর নেয়। সরকার রপ্তানিকে উৎসাহিত করার জন্য দেওয়া প্রণোদনায় আবার কর নেয়। তাঁদের মতে, সরকার এক পণ্যের ওপর দুবার কর নিচ্ছে।
তৈরি পোশাক খাতের অন্যতম শীর্ষ রপ্তানিকারক মাইক্রো ফাইবার গ্রুপ। এর পরিচালক ড. কামরুজ্জামান কায়সার বলেন, আসছে বাজেটে তৈরি পোশাক খাতে কর্মরত শ্রমিকদের মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বেতন-ভাতা পরিশোধের সময় কর মওকুফ করতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা শ্রমিকদের বিকাশের মাধ্যমে বেতন-ভাতা পরিশোধ করি। এই টাকা উত্তোলনে অপারেটর যে টাকা চার্জ করে, সেটা শ্রমিকদের আর্থিক সংগতির বিবেচনায় মওকুফ করা উচিত।’
করপোরেট ট্যাক্স ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে এক অঙ্কে আনার দাবি জানিয়ে কামরুজ্জামান বলেন, আগামী দিনে বিশ্ব অর্থনীতিতে একটা অনিশ্চয়তা আছে। বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কার মধ্যে অনেক বিনিয়োগকারী প্রত্যাশিত পরিমাণ রপ্তানি করতে পারছেন না। তাঁদের একটু স্বস্তি দেওয়ার জন্য সরকার করপোরেট ট্যাক্স কমিয়ে দিতে পারে। এতে ব্যবসায়ীরা একটু স্বস্তি পাবেন।
মুদ্রা বিনিময় হারে বিভিন্ন দরের কারণে আমদানি-রপ্তানিতে বিশৃঙ্খলার কথা উঠে এসেছে অনেক অর্থনীতিবিদ থেকে বিভিন্ন বিনিয়োগকারীর মুখে। তাঁদের অভিযোগ, অভিন্ন ডলার দর না থাকার কারণে আমদানি-রপ্তানিতে টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে।
কামরুজ্জামান কায়সার বলেন, ‘আমাদের দেশে ডলার সংকট আছে। ডলার বাঁচাতে সরকার কয়েকটা দর নির্ধারণ করার কারণে কাঁচামাল আমদানিতে প্রবৃদ্ধি কমে এসেছে। যার প্রভাব পড়েছে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে। সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা, উৎপাদন ও কর্মসংস্থানের জন্য সরকারের উচিত রপ্তানিমুখী শিল্পে ডলারের দাম একই হারে নির্ধারণ করা।’