রাজবাড়ী প্রতিনিধি
‘এ বছর ধান, পেঁয়াজ, মরিচ, মুলাসহ বিভিন্ন সবজি আবাদ করেছিলাম। সব নদীতে গেছে। এই ফসল বিক্রির টাকা দিয়ে আমার সংসার চলত। কীভাবে সংসার চালাব? কীভাবে বাঁচব? পাঁচটা ছেলেমেয়ে নিয়ে আমার সংসার চালানো কষ্ট হয়ে যাবে।’ কথাগুলো বলছিলেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের চর নারায়ণপুর গ্রামের শাহ আলম সরদার।
শাহ আলম বলেন, ‘আমার ৩৫ বিঘা জমি ছিল। পদ্মার ভাঙনে নদীতে বিলীন হতে হতে অবশিষ্ট ছিল ১০ বিঘা। ভাঙনে এই জমিও নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন মাঠে আসার কোনো উপায় নেই। কীভাবে চলব সেই চিন্তাই করছি।’
সরেজমিন দেখা গেছে, সদর উপজেলার চর নারায়ণপুর, বড় চর, বড় চর বেনিনগর, কালিতলা, মেছোকাটা গ্রামের তিন কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে অনেক কৃষকের উচ্ছে, পটোল, ঢ্যাঁড়স, মুলাসহ বিভিন্ন খেত ও ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। চোখের সামনে কৃষকের জমি, ফসল নদীতে বিলীন হলেও ভাঙন রোধে নেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যক্রম।
মকবুল হোসেন বলেন, `অন্তত ১০০ বিঘার বেশি জমি গেল এক মাসে বিলীন হয়েছে। আমার এক দাগে তিন পাখি জমি ছিল, সব ভেঙে গেছে। কয়েক দিন আগে বস্তা ফেলেছিল কিন্তু সেটা কোনো কাজে আসেনি।’
আলেয়া বেগম বলেন, `এ পর্যন্ত তেরোবার বাড়ি ভাঙছে আমার। এখন আর পারতেছি না। জায়গাজমি যা ছিল সব এহন নদীতে। এক মাস ধরে নদী ভাঙছে। অনেকের জমি চলে যাচ্ছে।’
সোলেমান সরদার বলেন, `এ বছর আধা মাইল জমি ভাঙছে। কত বিঘা হবে তার হিসাব নেই। আমরা যা আবাদ করতাম তা নদীতে ভেঙে গেছে। এখন আমাদের আর কিছুই নেই।’
ওহাব ব্যাপারী বলেন, `ভাঙন ঠেকানোর মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। এক মাস ধরে ভাঙছে। সরকারের কাছে দাবি জানাই, যেন দ্রুত নদীশাসন করে। তা না হলে শত শত কৃষক তাঁদের জমি হারিয়ে পথে বসে যাবেন।’
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর বর্ষা মৌসুমে (জুলাই-অক্টোবর) জেলায় (২৯ হেক্টর) ২১৭.৫ বিঘা জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। এর
মধ্যে আবাদি জমি (১৭.৫ হেক্টর) ১৩১ বিঘা।
রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফুর রহমান অঙ্কুর বলেন, নেপালে পানির ঢল ও ভারতে অতিবৃষ্টির কারণে উজান থেকে সেই পানি পদ্মা নদীতে প্রবেশ করেছে। যার ফলে অক্টোবর মাসে অস্বাভাবিক হারে পানি বৃদ্ধির পাশাপাশি তীব্র স্রোত ও ঘূর্ণনের কারণে রাজবাড়ী সদর ও পাংশা উপজেলায় কিছু কিছু এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। বেনিনগর, মহাদেবপুর ওই এলাকা আমাদের স্থায়ী তীর প্রতিরক্ষা বাঁধ নেই। ইতিমধ্যে আমাদের একটি প্রজেক্টের মাধ্যমে ওই জায়গাগুলো নির্ধারণ করে বোর্ডে পাঠানো হয়েছে। সেটা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ ছাড়া ঊর্ধ্বতন দপ্তরকে জানানো হয়েছে। তাদের নির্দেশনা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।