কুমিল্লার তিতাস উপজেলার বাতাকান্দি বাজারে সাপ্তাহিক হাট বসে বুধবার। এ উপলক্ষে আগের দিনই বাজারে মৌসুমি ফল মজুত করেন ব্যাপারীরা। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহে হাটে প্রচুর কাঁঠাল থাকলেও ক্রেতা না পেয়ে হতাশ তাঁরা। আজকের হাট ঘিরে গতকাল মঙ্গলবার বাজারে কাঁঠাল মজুত করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। তবে ক্রেতা না থাকায় কাঁঠাল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তাঁরা।
ব্যবসায়ীরা জানান, বাতাকান্দিতে সাপ্তাহিক হাটে দূর-দূরান্তের মানুষ আসে। সাশ্রয়ী দামে সপ্তাহের বাজার করে বাড়িতে নিয়ে যায়। তবে গতকাল বাজার ঘুরে দেখা যায়, দোকানপাটে বেচাকেনা থাকলেও রসালো ফল কাঁঠালের বাজারে তেমন ক্রেতা নেই। পথের পাশে কাঁঠালের স্তূপ থাকলেও ক্রেতার অভাব।
স্থানীয় কাঁঠাল ব্যবসায়ী ফজলুল হক জানান, গত বুধবার ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে ৭০ হাজার টাকা দিয়ে ১ হাজার কাঁঠাল গাড়িতে বাতাকান্দি হাটে আনেন। পাইকারি ও খুচরা ক্রেতাদের কাছে প্রায় কেনা দামে কাঁঠাল বিক্রি করেছেন। গত সোমবার রাতে আবারও ১ হাজার কাঁঠাল এনেছেন, সকালে ৫০টি বিক্রি করেছেন। তবে বুধবার সাপ্তাহিক হাটের অপেক্ষায় আছেন তিনি।
বাজারে কাঁঠালের চাহিদা সম্পর্কে স্থানীয় কাঁঠাল ব্যবসায়ী আবদুল লতিফ বলেন, ‘বাজারে তো মানুষই নাই, কাঁঠাল বেচমু কার কাছে।’ এর কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘তিতাসে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে কাঁঠালগাছ আছে। গৃহস্থরাই ৫-৬টা করে কাঁঠাল বাজারে এনে বেচে যায়। এ জন্যই আমাদের কাঁঠালের বিক্রি তেমন নাই।’
কাঁঠালের ব্যাপারী মো. জুয়েল মিয়া (৫৫) বলেন, ‘স্থানীয় আড়তদার থেকে ৬ হাজার টাকা দিয়ে ৫০টি কাঁঠাল কিনে সকালে থেকে বসে আছি, বিকেল ৪টা পর্যন্ত মাত্র ১৫টি কাঁঠাল বিক্রি করেছি, তা-ও কেনা দামে।’
গত সোমবার রাতে ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে ৫০০টি কাঁঠাল নিয়ে আসেন ব্যাপারী ইলিয়াস মিয়া (৬০)। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে তিনি বলেন, ‘সোমবার রাতে ৫০০টি কাঁঠাল ৭ হাজার টাকা ট্রাক ভাড়া করে নিয়ে আসি। আজ (মঙ্গলবার) সারা দিনে ৪০টি বিক্রি করেছি। আগামীকাল (বুধবার) হাটের দিন আশা করি সবগুলো বিক্রি করতে পারব। তবে লোকসান হবে।’
ইলিয়াস মিয়া আরও বলেন, ‘৩০ বছর ধরে বাতাকান্দি হাটে কাঁঠাল বিক্রি করি। আগে বড় নৌকা দিয়ে কাঁঠাল নিয়ে আসতাম, ভালো লাভ হতো। এখন বাড়ি বাড়ি কাঁঠালগাছ থাকায় তেমন একটা বেচাবিক্রি নাই।’
অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর উজ্জ্বল মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে কাঁঠাল কিনতে দেখা যায়। তিনি একটি বড় কাঁঠাল নেন ১৫০ টাকায়। তিনি বলেন, ‘এখন তো বাড়ি বাড়ি কাঁঠালগাছ আছে। আমাদের মতো যাদের জায়গা নেই, কাঁঠালগাছ নেই, তাদেরই বাজার থেকে কিনে খেতে হয়।’
জেলার দাউদকান্দি উপজেলার ইলিয়টগঞ্জের মো. শফিক মিয়া নামে এক কাঁঠাল ব্যবসায়ী কুমিল্লার কোটবাড়ির বাগান থেকে ২০০টি কাঁঠাল এনেছেন বাতাকান্দি বাজারে। তিনি বলেন, ‘গত বুধবার হাটে কেনা ও বেচা প্রায় সমান ছিল। আজ (মঙ্গলবার) আবার এসেছি ৩০টি কাঁঠাল নিয়ে, আগামীকাল (বুধবার) হাটে সব বিক্রি করতে পারলে কিছু লাভ হতে পারে।’