কয়রা প্রতিনিধি
কয়রায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চলছে পরিযায়ী পাখি শিকার। বিষটোপ কিংবা ফাঁদ পেতে অবাধে শিকার করা হচ্ছে বিশ্বের শীতপ্রধান বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা নানা প্রজাতির পরিযায়ী পাখি। প্রশাসনিক তৎপরতার অভাবের সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির অসাধু চক্র পাখি শিকার চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। এদিকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলছে, পরিযায়ী পাখি শিকারের ফলে পরিবেশের ওপর বিরূপ পড়তে পারে। পাশাপাশি দেশে পরিযায়ী পাখির আগমন কমে যেতে পারে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর শীত মৌসুমের শুরুতে হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি খুলনার বিভিন্ন অঞ্চলে আসে। হাওর ও বিল পরিবেষ্টিত অঞ্চলে পাখিগুলো আশ্রয় নেয়। শীত শেষে সেগুলো আবার নিজেদের আবাসে ফিরে যায়।
আরও জানা গেছে, এই শীতে কয়রা উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের নদী-নালা, খাল-বিল, ঝোপঝাড় ও সুন্দরবনসহ গড়ে তোলা সামাজিক বনায়ন গুলোতে ডাহুক, তীরশুল, নলকাক, ভাঁড়ই, রাঙ্গাবনী, গাঙচিল, রাতচড়া, হুটটিটি, হাড়গিলা, বালিহাঁস, সরালি কাস্তে, হুরহুরসহ বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে। সেই সঙ্গে অপতৎপরতা বেড়েছে পাখি শিকারিদের। শীতের শুরু থেকেই এ অঞ্চলে চলছে পাখি শিকারের মহোৎসব।
উপজেলার বামিয়া ইউনিয়নের শ্রীফলতলা গ্রামের তহুরা পারভিন বলেন, আমার বসতবাড়ির সঙ্গে দেড় বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের গাছ লাগানো হয়েছে। কয়েক বছর ধরে শীতের শুরুতেই সেখানে পরিযায়ী পাখির আগমন ঘটে। প্রতিদিন বিকেলে পাখিরা যখন দিন শেষে এই বাগানে ফিরে আসে তখন এলাকার মানুষ ছাড়াও বাইরের এলাকা থেকে অনেকে দেখতে আসেন। সবাই মুগ্ধ হয়ে পাখিদের নীড়ে ফেরা দেখেন। কিন্তু এক শ্রেণির অসাধু শিকারি রাতের আঁধারে এয়ারগান আর গুলতি দিয়ে এসব পাখি শিকার করেন। এ জন্য গত বছর আমার বাগান থেকে পরিযায়ী পাখি চলে গিয়েছিল।
তহুরা পারভিন আরও বলেন, ‘এ বছর আমার বাগানে আসা পরিযায়ী পাখি শিকার প্রতিহত করতে বাগান পাহারা দিচ্ছি। এরপরও গভীর রাতে অনেকে আমাকে ফাঁকি দিয়ে পাখি শিকারের চেষ্টা করছেন। প্রশাসনের সাহায্য ছাড়া আমার একার পক্ষে পাখি শিকারিদের ঠেকানো সম্ভব না।’
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মানব কল্যাণ ইউনিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আল-আমিন ফরাদ বলেন, ‘উপজেলার মদিনাবাদ লঞ্চঘাটের চর এলাকায় মানব কল্যাণ ইউনিটির পক্ষ থেকে সামাজিক বনায়ন গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি আশ্রয় নিয়েছে। এলাকার অসাধু কিছু শিকারি রাতের আঁধারে এয়ারগান দিয়ে এসব পাখি শিকার করেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়ায় পাখি শিকারিদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে।
সাইফুল ইসলাম নামের এক পাখি প্রেমী বলেন, ‘প্রতিবার শীত মৌসুমে আমাদের উপজেলায় পরিযায়ী পাখি শিকারের প্রবণতা বেড়ে যায়। এবারও কিছু অসাধু শিকারি রাতের আঁধারে ফাঁদ পেতে, গুলতি, ইয়ারগান ও দিনের বেলায় বিষ টোপ দিয়ে এসব পাখি শিকার করছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘অতিথি পাখির আশ্রয়স্থলে প্রশাসনিক নজরদারির সঙ্গে সঙ্গে পাখি শিকার রোধে লিফলেট বিতরণ ও প্রচার চালালে পরিযায়ী পাখি শিকার কমানো সম্ভব।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, ‘বন্যপ্রাণী নিধন দণ্ডনীয় অপরাধ। পরিযায়ী পাখি শিকার রোধে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন এলাকায় সভা করেছি। পাশাপাশি সামাজিক বনায়নে পাখিদের নিরাপদ আশ্রয় তৈরির জন্য মাটির ভাঁড় বেঁধে বাসা তৈরি করে দিয়েছি। কেউ যদি অতিথি পাখি শিকার করেন তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’