Ajker Patrika
হোম > ছাপা সংস্করণ

প্রথম বই কেনা

মাহবুব আশরাফ

প্রথম বই কেনা

সবকিছুরই প্রথমবারের স্মৃতি সবার মনে থাকে। আমারও আছে। সে এক অদ্ভুত ঘটনাবহুল স্মৃতি। স্কুলের ফাইনাল পরীক্ষায় আন্ডাগন্ডায় ফেল করে যে কেউ তার মনপসন্দ পুরস্কার পেতে পারে—এমন ঘটনা আমার জানা নেই।

প্রায় বছর দুয়েক পড়াশোনা থেকে নিরুদ্দেশ থাকার পর কোনো এক অক্টোবরের মাঝামাঝি আমাকে ঢাকার বিখ্যাত একটি স্কুলে ভর্তি করানো হলো ক্লাস টুতে। বিশাল স্কুল, সামনে বিরাট খেলার মাঠ। মাঠ দেখেই আমি আনন্দের সঙ্গে ভর্তি হলাম। কিন্তু ক্লাসে ঢোকার পর গম্ভীর, রাগী চেহারার শিক্ষকদের দেখে সেই আনন্দ হাওয়া।

দুই বছর পড়াশোনা না করে, কীভাবে ক্লাস টুয়ের শেষের দিকের পড়া পারব? আমিও পারতাম না কেবল বাংলাটা ছাড়া। বাংলাটা পারতাম, কারণ দুঃসময়ের সেই দুই-তিন বছর নতুন কোনো বাংলা বই ঘরে আসেনি বলে বড়রা পুরোনো বইগুলোই বারবার পড়তেন। দুপুরবেলায় আটকে রাখার জন্য মা যেকোনো একটা বই আমাকে ধরিয়ে দিয়ে বিছানায় শুয়ে বলতেন, ‘একটু পড়ে শোনা।’ আমি বানান করে করে মাকে পড়ে শোনাতাম। এভাবে নানান ধরনের বাংলা গল্পের বই পড়তে পড়তে বাংলাটা ভালোই শিখেছিলাম। তো স্কুলে ভর্তির পর দেখা গেল বাংলা ছাড়া আর কিছুই পারি না!

অন্যান্য বিষয়ে অবস্থা এতটাই সঙিন যে ইংরেজিতে নিজের নামটাও লিখতে পারি না। অঙ্কের বেলায় আরও এক কাঠি সরেস, একের ঘরের নামতাও পারি না। আমার এমন অবস্থা দেখে শিক্ষকেরা আমাকে শেখানোর আশা ছেড়ে দিলেন। শিক্ষকদের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়ে আমি খুশি মনে স্কুলে যেতে থাকলাম প্রতিদিন। এভাবেই যাচ্ছিল দিন বেশ ভালোই। কিন্তু ভালো দিন তো আর আজীবন থাকে না। শুরু হলো ফাইনাল পরীক্ষা।

পারি না কিছুই, তবুও পরীক্ষা দিতে বসলাম। বিষয় যেটাই হোক, প্রশ্নে যা-ই থাক, আমি বাংলা লিখে দিয়ে আসি! এমনকি ইংরেজি পরীক্ষাও বাংলায় দিয়ে এলাম। ফলাফল—ডাহা ফেল। ক্লাসের শিক্ষকেরা হাসেন, সতীর্থরা হাসে, আমি ওদের চেয়ে বেশি হাসি, আগামী এক মাস ছুটি এই ভেবে। সবার রিপোর্ট কার্ড হাতে হাতে দেওয়া হলো আমরটা ছাড়া। ওটা আমার বাবাকে এসে নিতে হবে। পরদিন বাবা স্কুল থেকে নিয়ে এলেন আমার রিপোর্ট কার্ড। লাল কালিতে ভরপুর সেই রিপোর্ট কার্ড আমার হাতে দিয়ে জানতে চাইলেন, ‘এখন কী করবি?’ ‘গল্পের বই কিনব।’ আমার নির্বিকার জবাবে বাবা ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া চাচাকে ডেকে দুটো টাকা দিয়ে বললেন, ‘ও যে বই কিনতে চায় কিনে দে।’

বাসা থেকে দেড়-দু শ গজ দূরে স্কুলের গেটের পাশের বইয়ের দোকানে গিয়ে গল্পের বই চাইতেই দোকানি ছোটদের শিক্ষামূলক বই বের করে দিলেন। কিন্তু কোনোটাই পছন্দ হয় না আমার। খানিক দূরেই আরকটা দোকান আছে। চাচাকে টানি সেটার দিকে। কিন্তু চাচা নড়ে না। কী আর করার, শিক্ষামূলক বইগুলো নাড়াচাড়া করতে করতে হাতে এল ছোট আকারের ‘মরুর বা আরব দেশের গল্প’ নামের একটা বই। হলুদের ওপর সাদা খেজুরগাছ আর উটের সারি। নিচে কালো হরফে বইয়ের নাম। না টানল প্রচ্ছদ, না দেখলাম ভেতরের লেখা। শুধু ‘গল্প’ শব্দটার কারণে বইটা কেনা হলো ১২ আনা দিয়ে। যেহেতু এখনো কিছু টাকা আছে, তাই চাচাকে নিয়ে চললাম পাশের দোকানে। এই দোকানি বোধ হয় ছোটদের শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে তেমন একটা উৎসাহী নন। বের করে দিলেন রংবেরঙের বই। বইগুলো ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের রাদুগা বা প্রগতি প্রকাশনের। কোনটা ছেড়ে কোনটা নেব, এটাই হলো সমস্যা। শেষ পর্যন্ত চড়ুই পাখির রঙিন ছবিওয়ালা একটা বই কেনা হলো। দাম আট আনা। জীবনের প্রথম কেনা বইগুলো এক্ষুনি পড়তে হবে বলে দিলাম ছুট। পেছনে চাচা দৌড়াছেন আর চেঁচাচ্ছেন। কে শোনে কার কথা। বই পড়ার লোভে খেয়ালই নেই যে আরেকটা বই কেনার মতো পয়সা এখনো রয়ে গেছে।

এরপর জীবনে অসংখ্য বই কিনেছি। প্রতিবার আনন্দও পেয়েছি প্রথমবারের মতোই। কিন্তু এখন যেখানে থাকি তার দুই-চার মাইলের মধ্যে কোনো বইয়ের দোকান নেই। দু-একটা যা আছে তাতে শুধু মেলে স্কুল-কলেজের গাইড বই আর বেহেশতি জওহর ধরনের নানা বই। আমি কী করব সেগুলো দিয়ে!

কপালগুণে আমার সন্তানেরাও বই পড়ার আনন্দটা পেতে শিখেছে। কিন্তু ওরা বই কিনতে চাইলে শুভদিনের অপেক্ষা করতে হয়। রাস্তাঘাটে জ্যাম কম থাকবে এমন একটা দিন দেখে বাপে-ঝিয়ে মিলে রওনা দিই নীলক্ষেতের দিকে। ওটাই এখন আমার বই কেনার শেষ ভরসার জায়গা। নিউমার্কেটের বইয়ের দোকানগুলোতে যে এখন প্লাস্টিকের গামলা বেচে!

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ

ঢাকা সড়ক পরিবহন: প্রশ্নবিদ্ধ কমিটিতেই চলছে মালিক সমিতির কার্যক্রম

৪০ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি করবে টিসিবি

৮ বছরে শিশুহত্যা হয়েছে ৪০০০

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির শীর্ষে বাংলাদেশ, তবে বাজারে পিছিয়ে

দেশে ব্যবসায় ঘুষ–দুর্নীতিসহ ১৭ রকমের বাধা

বিদ্যালয়ের জমিতে ৩৯১টি দোকান, ভাড়া নেয় কলেজ