দাকোপের বিভিন্ন হাট-বাজারে ইউরিয়াসহ বিভিন্ন সার সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে উপজেলার হাজারো তরমুজ ও ধান চাষি পড়েছেন বিপাকে।
কৃষি অধিদপ্তর ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় বিসিআইসির মোট ১০ জন ও বিএডিসির ৪ জন সারের ডিলার রয়েছেন। এ ছাড়া ৯৫ জন খুচরা সার বিক্রেতা রয়েছেন।
এ বছর সরকার প্রতি কেজি ইউরিয়া সারের মূল্য ১৬ টাকা, ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) ২২ টাকা, মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) ১৫ টাকা এবং ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) ১৬ টাকা নির্ধারণ করেছে। সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে এসব সার ৪ থেকে ৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
গত বছরের তুলনায় এবার তরমুজ চাষ বেড়েছে দ্বিগুণ। এ বছর তরমুজ চাষ হয়েছে ৭ হাজার ৬০৫ হেক্টর জমিতে। এ ছাড়া বোরো ধান ২১৫ হেক্টর, তিল ৩ হেক্টর, মুগডাল ৪ হেক্টর, ভুট্টা ৮ হেক্টর, বাঙ্গি ১৫ হেক্টর ও অন্যান্য শাক সবজি ৫০ হেক্টর। ফলে এলাকার হাজারো কৃষকের সারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
কৃষকদের এই চাহিদাকে পুঁজি করে সরকারি ওই নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে রীতিমতো সার বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন ডিলাররা।
খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার চালনা, বাজুয়া, কালিনগর, নলিয়ান বাজারসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছোট বাজারগুলোতে সরকার নির্ধারিত ওই মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছেন ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা। সরকারি মূল্য তালিকা ঝুলিয়ে রাখার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।
আর কৃষকেরাও বাধ্য হচ্ছেন অতিরিক্ত দামে সার কিনতে। সরকার ভর্তুকি দিয়ে কৃষকের দোরগোড়ায় সার পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করলেও এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে কৃষকেরা এর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এটা যেন মগের মুল্লুক বলেও অনেকেই মন্তব্য করেছেন।
চুনকুড়ি এলাকার উজ্জ্বল রায়, গোলক সরদার, কৈলাশগঞ্জের সঞ্জয় মণ্ডল, রমেশ মণ্ডল, বানিশান্তার মলয় রায়, হিমাদ্রী রায়, শ্যামল রায়, সাহেবের আবাদের টুলু রায়, সঞ্জয় রায়, বটবুনিয়ার প্রণব কবিরাজ, পানখালীর মণিশংকর রায়, বিপ্রদাশ ঘোষসহ বিভিন্ন অঞ্চলের একাধিক কৃষকদের সঙ্গে আলাপকালে তাঁরা জানান, সারের দোকানে গেলে প্রথমে বলে সার নেই। সারের সংকট চলছে। পরে প্রতি কেজিতে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ৪ থেকে ৫ টাকা বেশি দাম নিয়ে সার দেয়।
বিশেষ প্রয়োজনে অনেক বেশি দাম দিয়ে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন বলে তাঁরা জানান। কৃষকদের সঙ্গে সার ব্যবসায়ীরা লুকোচুরি খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে তাঁরা অনেকেই মন্তব্য করেন।
চুনকুড়ি এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য জীবনানন্দ মণ্ডল বলেন, ‘এ বছর কৃষকদের কাছ থেকে সার ও বীজের দাম অনেক বেশি নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। দেখে যেন মনে হয় হরিলুট চলছে।’
এ বিষয়ে উপজেলা সিনিয়র কৃষি কর্মকর্তা মেহেদি হাসান খান বলেন, ‘সারের অতিরিক্ত দামের বিষয় আমি এখনো কারও কাছ থেকে লিখিত বা মৌখিক কোনো অভিযোগ পাইনি। যদি অভিযোগ পাই তখন তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তা ছাড়া বিভিন্ন সারের দোকান মনিটরিং চলছে। এ সময় কিছু মেয়াদোত্তীর্ণ কীটনাশক জব্দ করা হয়েছে।’