হোম > ছাপা সংস্করণ

অযত্ন-অবহেলায় গণকবর

মাদারীপুর প্রতিনিধি

মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দেশের নিরীহ মানুষের ওপর ভয়াবহ নিষ্ঠুরতা চালায়। চালায় গণহত্যা। মানুষকে ধরে ধরে গুলি করে অথবা গলা কেটে নৃশংসভাবে হত্যা করে। পরে দেয় গণকবর। মাদারীপুরে রয়েছে এমন অসংখ্য গণকবর। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ৫১ বছর পরেও সেসব গণকবর সংরক্ষণের কোনো 
উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সেখানে গড়ে উঠেছে কলাবাগান, বাড়িঘর, ফসলি জমি ও খেলার মাঠ। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধারা।

স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল ভারতে প্রশিক্ষণের জন্য মাদারীপুরের ১৬০ ছাত্র-যুবককে স্টুয়ার্ড মুজিবের নেতৃত্বে ভারতে পাঠানো হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে মাদারীপুরের এ দলটিই ছিল সর্বপ্রথম ভারতে প্রশিক্ষণের জন্য যাওয়া। ভারতে প্রশিক্ষণ শেষে জুনের প্রথম দিকে মুক্তিযোদ্ধারা চারটি দলে বিভক্ত হয়ে মাদারীপুরে আসেন। তাঁরা নয় মাস বিভিন্ন রণাঙ্গনে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন। এর মধ্যে রাজৈর টেকেরহাট, পাখুল্যা, কালকিনি, কলাবাড়ি, খোয়াজপুর, সাধুর ব্রিজ ও সমাদ্দারের যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। ৮ থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাদারীপুর সদর উপজেলার সমাদ্দার ব্রিজে সম্মুখযুদ্ধ শেষে পাকিস্তানি বাহিনীর একজন মেজর, একজন ক্যাপ্টেনসহ মোট ৩৮ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী খলিল বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। দুই দিনব্যাপী যুদ্ধে শহীদ হন সবচেয়ে ছোট্ট মুক্তিযোদ্ধা ও সবার প্রিয় সরোয়ার হোসেন বাচ্চু। এ ছাড়া মাদারীপুরে নয় মাস যুদ্ধে ৫৩ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যুদ্ধের নয় মাসে মাদারীপুরের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সহস্রাধিক মুক্তিপাগল মানুষকে আটক করে টর্চার সেলে নির্যাতন করা হয়। এ আর হাওলাদার জুট মিলের অভ্যন্তরে ডি-টাইপ বিল্ডিংয়ে স্থাপিত হানাদার বাহিনীর টর্চার সেলে প্রায় ৫০০ নারী-পুরুষকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। তাঁদের অনেক হাওলাদার জুট মিলে আড়িয়াল খাঁ নদের পাড়ে স্থাপিত জেটির ওপর দাঁড় করিয়ে গুলি চালিয়ে হত্যা করে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। অন্যদের ডি-টাইপ বিল্ডিংয়ের পশ্চিম দিকের খোলা জায়গায় মাটি চাপা দেওয়া হয়। জেলার বিভিন্ন স্থানে এ রকম গণকবর রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, মাদারীপুরের এসব গণকবর আজও অযত্ন-অবহেলায় অরক্ষিত আছে। সেখানে গড়ে উঠেছে কলাবাগান, বাড়িঘর, ফসলি জমি ও খেলার মাঠ। হারিয়ে যাচ্ছে শহীদের স্মৃতি।

মুক্তিযুদ্ধের খলিল বাহিনীর প্রধান বীর মুক্তিযোদ্ধা খলিলুর রহমান খান বলেন, ‘এ আর হাওলাদার জুট মিলের গণকবরটিই মাদারীপুর জেলার সবচেয়ে বড় গণকবর হিসেবে পরিচিত। এ ছাড়া আরও চারটি গণকবর আছে। এগুলো হচ্ছে পাখুল্যা, মিঠাপুর, সেনদিয়া ও কলাগাছিয়া। এসব এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনী গণহত্যা চালিয়ে অসংখ্য নিরীহ মানুষকে হত্যা করে মাটি চাপা দেয়। অযত্ন-অবহেলায় এসব গণকবর নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে।’

স্থানীয় আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি যুদ্ধের সময় দেখেছি পাকিস্তানি বাহিনীরা ৭-৮ জনকে ধরে এনে মিলের মাঠে গর্ত করতে বলেন। গর্ত করা হলে চারজনকে ওই গর্তে নামতে বলেন। পরে তারা তাঁদের গুলি করে মেরে ফেলে। বাকি চারজনকে ওই গর্ত মাটি দিয়ে ভরাট করতে বলে। এর পাশে পাকিস্তানি বাহিনী ওই চারজনকে দিয়ে গর্ত করেন। গর্তের ভেতরে তাঁদের নামিয়ে গুলি করে মাটি চাপা দেয়। মুক্তিযুদ্ধে মাদারীপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান অনস্বীকার্য।’

আনোয়ার হোসেন আরও বলেন, ‘মিত্র বাহিনীর সহযোগিতা ছাড়া একমাত্র মাদারীপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছিল, যা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বিরল ঘটনা।’

এ বিষয়ে মাদারীপুর মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ সমিতির সভাপতি সাজাহান হাওলাদার বলেন, ‘আমাদের সবার একত্রিত হয়ে এই গণকবর সংরক্ষণ করা উচিত।’

জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, ‘ইতিমধ্যেই গণকবর রক্ষার জন্য আমরা নানা পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি। খুব দ্রুত এ নিয়ে কাজ শুরু করা হবে।’

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ

ঢাকা সড়ক পরিবহন: প্রশ্নবিদ্ধ কমিটিতেই চলছে মালিক সমিতির কার্যক্রম

৪০ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি করবে টিসিবি

৮ বছরে শিশুহত্যা হয়েছে ৪০০০

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির শীর্ষে বাংলাদেশ, তবে বাজারে পিছিয়ে

দেশে ব্যবসায় ঘুষ–দুর্নীতিসহ ১৭ রকমের বাধা

বিদ্যালয়ের জমিতে ৩৯১টি দোকান, ভাড়া নেয় কলেজ

সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ প্রাণহানি

সেকশন