হোম > ছাপা সংস্করণ

আরও রোহিঙ্গা নিতে চাপ, বিরক্ত সরকার

সাহিদুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা ও মাঈনুদ্দিন খালেদ, কক্সবাজার 

নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের কমপক্ষে ১০ লাখ মানুষ কক্সবাজারের বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে আছে। তাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করেছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। কিন্তু এই সাত বছরে একজন লোকও নেয়নি দেশটি। উল্টো নতুন করে আরও কয়েক হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় আছে। তারা যেন এখানে ঢুকতে পারে, সে জন্য সীমান্ত খুলে দিতে বাংলাদেশকে চাপ দিচ্ছে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিকভাবে প্রভাবশালী কয়েকটি দেশ। বিদেশিদের এমন চাপে বিরক্ত সরকার। 

সরকারের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গতকাল রোববার আজকের পত্রিকাকে এই বিরক্তির কথা জানান। তিনি বলেন, আরও রোহিঙ্গা নিতে সরকারের অনীহার কথা কূটনৈতিক চ্যানেলে জাতিসংঘসহ সবাইকে বলা হয়েছে। তারপরও চাপ থামছে না। 

মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ ছাড়াও আরও চারটি দেশের সীমান্ত আছে। দেশগুলো হলো—ভারত, চীন, থাইল্যান্ড ও লাওস। কিন্তু আন্তর্জাতিক মহলটি সীমান্ত খুলে দিতে কেবল বাংলাদেশকেই সুনির্দিষ্ট করে বলছে। অন্য দেশগুলোর নাম সরাসরি নেয় না তারা। 

রাখাইন থেকে প্রায় ৪৫ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে আসছে, এমন তথ্য দিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক নতুন করে রোহিঙ্গাদের ঢুকতে দিতে বলেছেন বাংলাদেশকে। তুর্কের দপ্তরের মুখপাত্র এলিজাবেথ থ্রসেল ২৪ মে জেনেভায় সাংবাদিকদের বিষয়টি জানান। তুর্ক এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইনের দোহাই দিয়ে বলেন, বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক সংহতি নিশ্চিত করতে হলে নতুন করে সম্প্রদায়টির আরও যারা আসতে চায়, তাদের নিতে হবে। 

এর ঠিক আগের দিন ২৩ মে আরেকটু কড়া করে একই কথা এক্স-পোস্টে বলেন মিয়ানমারে মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ টম এন্ড্রুজ। তিনি বলেন, প্রাণ নিয়ে যারা পালাচ্ছে, তাদের জন্য বাংলাদেশকে সীমান্ত খুলতে হবে। আর বিশ্ব সম্প্রদায়কে তিনি বললেন রোহিঙ্গাদের জন্য জরুরি সাহায্য পাঠাতে।

মিয়ানমারের রাখাইনের সঙ্গে সীমান্ত থাকা অন্য কোনো দেশের নাম নেই জাতিসংঘের এই দুই কর্মকর্তার বিবৃতিতে। 

ঢাকায় জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর প্রতিনিধি সুম্বুল রিজভী দুই সপ্তাহ আগে সরকারের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে জানতে চান, কক্সবাজারে আশ্রয়শিবিরে যে রোহিঙ্গারা থাকে, তাদের স্বজনদের রাখাইন থেকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া যায় কি না।  

সুম্বুল রিজভীকে জানানো হয়েছে, আশ্রয়শিবিরে থাকা রোহিঙ্গারা চাইলে যেকোনো সময় রাখাইনে যেতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার রাখাইন থেকে নতুন করে কাউকে আনুষ্ঠানিকভাবে আসতে দেওয়ার বিরুদ্ধে।

বর্তমানে নিউইয়র্ক সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের জাতিসংঘে কয়েকটি সভায় সরকারের এই দৃষ্টিভঙ্গির কথা তুলে ধরার কথা রয়েছে। 
সীমান্ত খুলে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের ওপর তৈরি হওয়া এই চাপ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউট প্রেসিডেন্ট এম হুমায়ুন কবির বলেন, মানবাধিকারের একটি বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তারা এমন কথা বলে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিকগুলো তারা বিবেচনায় নেয় না। 

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক এই রাষ্ট্রদূত আজকের পত্রিকাকে গতকাল রোববার বলেন, মিয়ানমারের ভেতরকার সংঘাতময় পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাসংকটটি বিদেশিদের কাছে তার গুরুত্ব হারিয়ে ফেলেছে। 

সরকারি কয়েকটি সূত্র বলেছে, সশস্ত্র বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মির কাছে রাখাইনে মার খেয়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনী এখন রোহিঙ্গাদের জোর করে দলভুক্ত করছে। আরসা ও আরএসও-সহ কক্সবাজারে সক্রিয় থাকা রোহিঙ্গাদের কয়েকটি গ্রুপ আশ্রয়শিবির থেকে রোহিঙ্গা যুবকদের মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পক্ষে লড়তে রাখাইনে পাঠাতে সক্রিয় রয়েছে।   

সরকার যেন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পক্ষে লড়তে আশ্রয়শিবির থেকে রোহিঙ্গাদের জোর করে রাখাইনে না পাঠায়, সে বিষয়ে বাংলাদেশকে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশ।     

এমন পরিস্থিতিতে সরকার সম্প্রতি একটি অনানুষ্ঠানিক কূটনৈতিক পত্রে (ননপেপার) সংশ্লিষ্ট দেশ ও জাতিসংঘের কয়েকটি সংস্থাকে জানিয়েছে, রাখাইনের সংঘাতময় পরিস্থিতিতে আশ্রয়শিবিরগুলো থেকে রোহিঙ্গাদের জোর করে সেখানে পাঠানো হবে না। 

হুমায়ুন কবির মনে করেন, মিয়ানমারের ভেতরকার সংঘাতে সেখানকার রোহিঙ্গাদের জন্য ঝুঁকি তৈরি হলে তার নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশেও পড়বে। এ কারণে সরকারের কূটনৈতিকভাবে সক্রিয় হওয়া দরকার। মিয়ানমার জান্তা ও আরাকান আর্মির জন্য অন্তত কড়া করে একটি বিবৃতি দেওয়া দরকার এই বলে যে তারা সংঘাতের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য কোনো ঝুঁকি তৈরি না করে।   

সীমান্তে নতুন করে যাতে কোনো অনুপ্রবেশ না ঘটে, সে জন্য বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) সার্বক্ষণিক সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে।  

সীমান্তে সতর্কতা সত্ত্বেও রোহিঙ্গারা বিপুল সংখ্যায় ঢুকতে চাইলে সীমান্তের সতর্কতা কতটা কাজে লাগবে, সে বিষয়ে সন্দেহ আছে সরকারি কর্মকর্তাদেরই। 
কক্সবাজার থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, রাখাইন রাজ্যের বুথিডং শহর আরাকান আর্মি ১৮ মে পুরোপুরি দখলে নেয়। এরপর থেকে রোহিঙ্গারা বিপুল সংখ্যায় পালিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে আসছে। প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা টেকনাফ, হোয়াইকং, থাইংখালী, ঘুমধুম, তুমব্রু, বাইশফাঁড়ি, নিকুছড়ি, চাকঢালা, জামছড়ি, ফুলতলী, পাইনছড়ি ও আলীকদমের পুয়ামুহুরীর বিপরীতে মিয়ানমার সীমানার বেশ কয়েক কিলোমিটার ভেতরে অবস্থান করছে।

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ

ঢাকা সড়ক পরিবহন: প্রশ্নবিদ্ধ কমিটিতেই চলছে মালিক সমিতির কার্যক্রম

৪০ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি করবে টিসিবি

৮ বছরে শিশুহত্যা হয়েছে ৪০০০

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির শীর্ষে বাংলাদেশ, তবে বাজারে পিছিয়ে

দেশে ব্যবসায় ঘুষ–দুর্নীতিসহ ১৭ রকমের বাধা

বিদ্যালয়ের জমিতে ৩৯১টি দোকান, ভাড়া নেয় কলেজ

সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ প্রাণহানি

সেকশন