আফগানিস্তানকে হারানোর পরের দিন পুরো দল ছিল বিশ্রামে। বিশ্রামের দিনে পাঁচ ক্রিকেটার তবু স্টেডিয়ামের জিমে এসেছিলেন। লিটন দাস এই দলে ছিলেন না। সারা দিন হোটেল শুয়ে-বসে থাকার পর সেদিন বিকেলে কজন সতীর্থকে নিয়ে ধর্মশালার কেব্ল কার বা স্কাইওয়ের অভিজ্ঞতা নিতে এসেছিলেন তিনি।
সেখানেই কজন সাংবাদিককে দেখে লিটনের তির্যক প্রশ্ন, ‘প্র্যাকটিস না করে ঘুরছি, এটা নিয়ে নিউজ করবেন?’ ২০২২ সালটা স্বপ্নের মতো কাটানো লিটনের এ বছরটা যাচ্ছে উল্টো গতিতে। রানতৃষ্ণায় ছটফট করা লিটনকে গত মাসে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ড সিরিজে সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে আপৎকালীন অধিনায়ক করেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
অধিনায়কত্বের চাপ, রান না করার হতাশায় নিউজিল্যান্ড সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ড্রেসিংরুমে ফেরার সময় ব্যাট পর্যন্ত আছড়ে ভেঙেছিলেন! সেই দৃশ্য ফেসবুক দুনিয়ায় ভাইরালও হয়েছে। যে লিটনের মধ্যে ভবিষ্যতের অধিনায়কের ছবি দেখছিল বিসিবি, তাঁকে বিশ্বকাপের আগমুহূর্তে লিডারশিপ গ্রুপ থেকে ‘মুক্তি’ দেওয়া হলো। তাঁর জায়গায় আকস্মিক সহ-অধিনায়ক করা হলো নাজমুল হোসেন শান্তকে। পরে এক সাক্ষাৎকারে সাকিব আল হাসান জানিয়েছিলেন, রানে ফিরতে লিটনকে চাপমুক্ত রাখতেই এ সিদ্ধান্ত।
লিটনকে জেঁকে ধরা চাপ তবু সরছিল না। গুয়াহাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে ৬১ রান করার পর ইংলিশদের বিপক্ষে আরেকটি গা গরমের ম্যাচে করলেন ৫ রান। ধর্মশালায় বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে লিটন ফিরলেন ১৩ রানে। গতকালকের ম্যাচের আগে এ বছর ওয়ানডেতে ১৭ ইনিংসে ২৩.৪০ গড়ে ৩ ফিফটিতে ৩৫১ রান করা ২৮ বছর বয়সী ওপেনার ইংলিশদের বিপক্ষে বাদ পড়তে পারেন—এ গুঞ্জনও ছড়িয়ে পড়ে। যদিও প্রতিপক্ষ আর কন্ডিশন বিবেচনায় সেটি হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ ছিল। বাংলাদেশ ৬ নম্বর বোলারের সমাধান ওপেনার লিটনকে দিয়ে করালে সেটি নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্নও উঠত।
তবে এটা ঠিক, গতকাল লিটন ব্যর্থ হলে চেন্নাইয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁর ব্যাপারে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর্যায়ে চলে যেত টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে সেই সুযোগ আর দেননি লিটন। ধর্মশালার ব্যাটিংবান্ধব উইকেটে সতীর্থদের ব্যর্থতার দিনে তিনিই কিছুটা এগিয়ে এলেন ইংলিশ বোলারদের জবাব দিতে। ক্রিস ওকসের করা প্রথম ওভারেই টানা তিন চার দিয়ে শুরু। প্রথমটি কবজির মোচড়ে, দ্বিতীয়টি চোখের মায়াঞ্জন এঁকে দেওয়া ড্রাইভ, তৃতীয়টি সৌর্যের প্রতীক হিসেবে সপাটে পুল।
পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত ধর্মশালায় ইংলিশদের রানপাহাড়ের জবাবে লিটনের আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিং ছিল দেখার মতো। দারুণ নিয়ন্ত্রণে এগোতে থাকা লিটন সেঞ্চুরির আশা জাগিয়েও ফিরে এলেন ওকসের এক কাটারে ব্যাটের কানায় লাগিয়ে উইকেটকিপার জস বাটলারের ক্যাচ হয়ে। ইনিংসটা আরও বড় হতে পারত—এমন আফসোস থাকলেও ১১৫.১৫ স্ট্রাইক রেটে তোলা ৭৬ রানের ইনিংসটি তাঁর কাছে হয়ে রইল আপাতত ‘বাদ পড়ার’ আশঙ্কা দূর করার গ্রিন কার্ড হয়ে।
ওপেনারদের ধারাবাহিক ব্যর্থতার মিছিলে লিটনের ফেরায় একটু যেন স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। বাংলাদেশ কোচ গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বললেন, ‘এই ম্যাচ থেকে যদি ইতিবাচক কিছু নেওয়ার থাকে, সেটি লিটনের ছন্দে ফেরা। যেভাবে সে ব্যাটিং করেছে, এটা ভালো দিক। তার জন্যও। জানি, সে ম্যাচ জেতানো খেলোয়াড়। ইনিংসের শুরুতে আমাদের রান দরকার। আমরা নিয়মিত দ্রুত উইকেট হারাতে পারি না। সে (লিটন) ছন্দে ফিরেছে। মুশিও (মুশফিকুর রহিম) কিছু রান পেয়েছে, এটা আমাদের জন্য স্বস্তির।’