বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নৌকা প্রার্থীদের ভরাডুবির জন্য আওয়ামী লীগের কিছু নেতাদের দায়ী করেছেন প্রার্থীরা। দায়ী আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলে গত বুধবার সংবাদ সম্মেলন করেছেন নৌকা প্রতীকের পরাজিত পাঁচ প্রার্থী।
পৌর সদরের ওয়াপদা মোড়ের কাজী হারুন শপিং কমপ্লেক্সে বুধবার দুপুরে ওই পাঁচ প্রার্থী সাংবাদিকদের কাছে তাঁদের বক্তব্য তুলে ধরেন। পাঁচ প্রার্থী হলেন, চতুল ইউনিয়নের খন্দকার আবুল বাসার, বোয়ালমারী সদর ইউনিয়নের আব্দুল ওহাব মোল্লা, রুপাপাত ইউনিয়নের এস এম মহব্বত আলী, ময়না ইউনিয়নের পলাশ বিশ্বাস ও দাদপুর ইউনিয়নের শেখ সাজ্জাদুর রহমান হাই।
বোয়ালমারী উপজেলার ১০ ইউপির মধ্যে ৯ টিতেই হেরেছে নৌকা। চতুল, গুণবহা ও দাদপুর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। আবার চতুল, দাদপুর, গুণবহা ও পরমেশ্বরদী ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীরা চতুর্থ অবস্থানে ছিলেন। এ ছাড়া বোয়ালমারী সদর ইউনিয়নে ছিলেন তৃতীয় অবস্থানে।
বোয়ালমারী সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নৌকার প্রার্থী আব্দুল ওহাব মোল্লা দাবি করেন, উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের পদধারী নেতারা তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছেন। তিনি বৃদ্ধ ও অথর্ব বলে প্রচার করেছেন। অপর দিকে জয়ী বিদ্রোহী প্রার্থী মো. আব্দুল হক শেখকে তাঁরা সবাই মদদ দিয়েছেন ও নির্বাচনে জয়ী হতে সহযোগিতা করেছেন।
চতুল ইউনিয়নের নৌকা প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খন্দকার আবুল বাসার অভিযোগ করেন, ‘চতুল উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে আমার কোনো নির্বাচনী এজেন্ট দেওয়া যায়নি। অথচ কেন্দ্রের ৫০ গজের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন জ্যেষ্ঠ সহসভাপতির বাড়ি। ওই কেন্দ্রে আমি মাত্র পাঁচ ভোট পেয়েছি। অথচ আমার জানামতে ওই সহসভাপতির পরিবারে ছয়জন ভোটার রয়েছেন। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কেন্দ্রে আমি পেয়েছি ১০ ভোট। কিন্তু ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ মিলে প্রতিটি ওয়ার্ডে আমাদের ২০৮ জনের কমিটি রয়েছে।’
রুপাপাত ইউনিয়নের প্রার্থী জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি এস এম মহব্বত আলী বলেন, এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সক্রিয় ছিল। কেননা ইউনিয়নের পদধারী অনেক নেতা জাতীয় পার্টি ও বিএনপি থেকে আসা।
দাদপুরের প্রার্থী ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ সাজ্জাদুর রহমান হাই বলেন, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতারা বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে আঁতাত করে তাঁকে পরাজিত করেছেন।
ময়না ইউনিয়নের প্রার্থী জেলা মৎস্যজীবী লীগের সদস্য পলাশ বিশ্বাস দাবি করেন, নির্বাচনের মাঠে তিনি একা ছিলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ তাঁর সঙ্গে ছিল না। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাদের সঠিক ভূমিকা না থাকায় নির্বাচনে তাঁদের ভরাডুবি হয়েছে।
এই পাঁচ প্রার্থীই নির্বাচনে তাঁদের পরাজয়ে দায়ী স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনসমূহের নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জোরালো দাবি করেছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান মীরদাহ পিকুল বলেন, বিভিন্ন ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থীদের চিঠি দিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হয়েছিল। পরে নয়জন প্রার্থীকে উপজেলা আওয়ামী লীগ থেকে সাময়িক বহিষ্কার ও চূড়ান্ত বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রের কাছে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। তাই পরাজিত প্রার্থীদের অভিযোগ মনগড়া ও আবেগজনিত।