আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম
দেশের বৃহৎ শুল্ক স্টেশন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ২০২২-২৩ অর্থবছরে রেকর্ড ৬১ হাজার ৪৬৪.৭২ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। তার আগের অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৫৯ হাজার ১৫৯.৮৩ কোটি টাকা। কিন্তু বছরে ৬১ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায় করলেও ৬৪ বছর ধরে নিজেদের ব্যবহৃত জায়গার ভাড়া দিতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। আর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ২১ কোটি টাকার বকেয়া ভাড়া পরিশোধ না করায় কাস্টম হাউসের নতুন কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ প্রকল্পের বাস্তবায়নও আটকে রয়েছে।
কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, কাস্টম হাউসের পুরোনো জরাজীর্ণ ভবনটি ভেঙে নতুন স্থাপনা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ১ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ভবন, সাগরিকায় ভ্যাট ট্রেনিং একাডেমি ও বেনাপোল কাস্টম হাউসসহ আরও কিছু উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নতুন ভবন নির্মাণের জন্য বরাদ্দের পরিমাণ ৭১৫ কোটি টাকা। কিন্তু বন্দরের ভাড়া পরিশোধ না করায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ভবন নির্মাণ আটকে গেছে। বন্দরের অনাপত্তিপত্র ছাড়া চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) থেকে ভবন নির্মাণের নকশা অনুমোদন নিতে পারছে না তারা।
বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, বকেয়া ভাড়া পরিশোধ করা ছাড়া তারা কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে অনাপত্তিপত্র দেবে না। বন্দর সূত্রে জানা গেছে, গত ৬৪ বছরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস ভবন এবং মধ্য হালিশহর মৌজায় কাস্টমসের অকসন শেডের পাঁচ একর জমি ভাড়া বাবদ মোট বকেয়ার পরিমাণ ২১ কোটি ৬ লাখ ৭১ হাজার ৩৭৪ টাকা। এর মধ্যে শুধু ভাড়ার পরিমাণ ১৮ কোটি ৬৬ লাখ ৯৯ হাজার ৯৪১ টাকা। আর ভাড়ার ওপর ভ্যাট বাবদ রয়েছে ২ কোটি ৩৯ লাখ ৭১ হাজার ৪৩৭ টাকা। ১৯৬০ সাল থেকেই চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের জায়গার ভাড়া বকেয়া রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তরফে প্রতিষ্ঠানটিকে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়। সর্বশেষ গত ২০ মার্চ চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার বরাবর আবারও চিঠি দেয় তারা। এতে বকেয়া ভাড়া ও ভ্যাটের টাকা পে-অর্ডার বা ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সাত দিনের মধ্যে জমা করে চালানের মূল কপি জমা দিতে বলা হয়। তার আগে গত বছরের ১৫ জুন চট্টগ্রাম বন্দরের মালিকানাধীন ৮.৩৩৬১ একর জমিতে কাস্টম ভবন নির্মাণের জন্য অনাপত্তি চেয়ে আবেদন করা হয়।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, আইন অনুযায়ী বন্দরের মালিকানাধীন জমির ভাড়া পরিশোধ ছাড়া ওই জায়গায় নতুন কোনো স্থাপনা নির্মাণে অনাপত্তি দেওয়ার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপকমিশনার ও মুখপাত্র কাজী ইরাজ ইশতিয়াক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি এখানে নতুন এসেছি। এ সম্পর্কে আমার ধারণা নেই।’
তবে কাস্টমসের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এ খাতে খরচের প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ নেই। বরাদ্দের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে জানানো হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, দুটি প্রতিষ্ঠানই সরকারি। তবে ভাড়া মাফ করার সুযোগ কারও নেই। এই টাকা পরিশোধ করতে হবে।