শেরপুরে কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টিতে ৫ হাজার হেক্টর বোরো ধান ও সবজিখেতের ক্ষতি হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ভোররাতে জেলা সদরসহ ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলায় এই কালবৈশাখী হয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন জেলার হাজারো কৃষক। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারি সহায়তা চেয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা। কৃষি বিভাগ বলছে, ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে।
জেলা কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় কৃষক সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার ভোররাতে সাহ্রির পর হঠাৎ দমকা হাওয়াসহ কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। আর এতে শেরপুর সদর, শ্রীবরদী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার বেশ কিছু বোরোখেতের আধা পাকা ধান পড়ে যায়। ধানের গাছ নুয়ে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শতাধিক হেক্টর জমির ফসল। করোনার কারণে এমনিতেই দুই বছর ধরে নানা কারণে ধান আবাদে লোকসান লেগেই আছে। এবার ধান কাটা ও ঘরে তোলার মৌসুম মাত্র শুরু হয়েছে। এর মধ্যে শিলাবৃষ্টিতে যে ক্ষতি হয়েছে, তা পোষানো কঠিন হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা। এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন জায়গায় কলাবাগান, সবজিবাগানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে সরেজমিন সদর উপজেলার মোবারকপুর, শ্রীবরদী উপজেলার পশ্চিম ঝিনিয়া ও খরিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, দমকা হাওয়া ও শিলাবৃষ্টিতে খেতের ধান নুয়ে পড়েছে। যে ধানগাছগুলো দাঁড়িয়ে আছে, সেগুলোর শিষ ঝরে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া কিছু নিচু এলাকায় বৃষ্টিতে ধান গাছ নুয়ে পড়ে তলিয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে শ্রীবরদী ও ঝিনাইগাতী উপজেলায়।
সদর উপজেলার চরশেরপুর এলাকার কৃষক মো. আব্দুল জলিল বলেন, ‘আমি এবার এক একর বোরো ধান আবাদ করেছিলাম। ধান পাকা শুরু হওয়ায় কয়েক দিনের মধ্যেই কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এর মধ্যেই শিলাবৃষ্টিতে খেতের বেশির ভাগ ধানই পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন সারা বছর চলবে কীভাবে খুব দুশ্চিন্তায় আছি।’
শ্রীবরদী উপজেলার খড়িয়া কাজীরচর ইউনিয়নের পশ্চিম ঝিনিয়া গ্রামের কৃষক মো. আব্দুল মালেক বলেন, ‘২৫ কাঠা জমিতে বোরো আবাদ করেছি। এক রাতের বৃষ্টিতেই সব শেষ আমার। আধা ঘণ্টা ধরে খালি শিলাই পড়েছে। এ কারণে খেতের সব ধান পড়ে গেছে। এখন বউ পুলাপান নিয়ে কি খামু চিন্তায় বাঁচতাছি না। সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা না করে তাইলে আমরা শ্যাষ।’
একই গ্রামের কৃষক মো. খলিলুর রহমান বলেন, ‘বোরো আবাদের ধান দিয়াই আমগর সারা বছরের খাওন চলে। মঙ্গলবার সকালে বৃষ্টি আর শিলে সব ধান খেয়ে দিছে। আমরা সরকার থেকে সহযোগিতা চাই।’ একই কথা জানান মো. জুলহাস আলী, মো. চাঁন মিয়া, মো. সেলিম মিয়া, মো. জয়নাল আবেদীন, মো. মোশাররফ হোসেন, মোহাম্মদ আলীসহ বেশ কয়েকজন কৃষক।
এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মোহিত কুমার দে বলেন, ‘জেলার তিনটি উপজেলায় প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমির ধান নষ্টের খবর পেয়েছি। কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টিতে শেরপুরে বোরো আবাদের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। কৃষি বিভাগের লোকজন মাঠপর্যায়ে ক্ষতি নিরূপণে কাজ করছে। কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তাঁদের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’