রাজধানীর বঙ্গবাজারসহ পুড়ে যাওয়া সাতটি মার্কেটের ক্ষতিগ্রস্ত দোকানমালিক ও ব্যবসায়ীরা দোকান ফিরে পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। দোতলা, তিনতলা ও চারতলা মার্কেটগুলোর জায়গায় খোলা আকাশের নিচে চৌকি বসালেও প্রায় ছয় হাজার ব্যবসায়ীর সবার স্থান হবে না বলেই ধারণা তাঁদের।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের অস্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। গতকাল বৃহস্পতিবার বঙ্গবাজার পরিদর্শনকালে তিনি এসব কথা জানান। এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস সেখানে পাইকারি মার্কেট করার কথা জানিয়েছেন।
গত মঙ্গলবারের আগুনে বঙ্গবাজারসহ সাতটি মার্কেট পুড়ে গেছে। লাগোয়া এসব মার্কেটে দোকান ছিল প্রায় ছয় হাজার। গতকাল সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বঙ্গবাজারের সামনের সড়কের দুই পাশ প্রতিবন্ধকতা দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। পুড়ে যাওয়া মার্কেটের স্থান হলুদ রংয়ের রশি দিয়ে ঘেরা। মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জটলা।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দোতলা, তিনতলা, চারতলা এসব মার্কেটের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী প্রায় ছয় হাজার। কোনো কোনো ব্যবসায়ীর সর্বোচ্চ ২০টি দোকানও ছিল। অনেকে দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছিলেন। তাই মার্কেটের জায়গায় খোলা আকাশের নিচে অস্থায়ীভাবে চৌকি ফেলে ব্যবসার সুযোগ দিলেও অনেকের ভাগ্যেই তা জুটবে না। কিন্তু তাঁরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত। ঈদের আগেই সবাই ব্যবসায় ফিরতে চান। এ ছাড়া পাইকারি মার্কেট করার ঘোষণায় খুচরা ব্যবসায়ীরা সেই মার্কেটে দোকান পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন।
পুড়ে যাওয়া মহানগরী মার্কেটের নিচতলা ও দোতলায় দুটি দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করতেন মো. রাশেদ ইসলাম। ওই দুই দোকানের একগুচ্ছ চাবি নিয়ে তিনি ভারাক্রান্ত মনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি বললেন, ‘গ্রামের জমি বিক্রির টাকা, বোনের জমানো টাকা দিয়ে ঈদের আগে মাল তুলেছিলাম। সব শেষ। এখানে দোকানের মালিক হয়তো দোকান পাবেন, কিন্তু আমরা কোথায় যাব? তিনি যদি আমাদের দোকান না দেন, তখন কী হবে? এখানে আবার বসতে না পারলে পাওনাদারদের চাপ বাড়বে। কী যে হবে বুঝতে পারছি না।’
ব্যবসায়ীরা বলেন, বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা ঈদের আগে আরও দুই-এক দফা জামাকাপড় নেবেন। এখানে দাঁড়াতে পারলে হয়তো কিছু ব্যবসা করতে পারবেন। তবে কেউ স্পষ্টভাবে কিছু বলছেন না।
নাজমুল ইসলামের ছিল তিনটি দোকান ও একটি গুদাম। তিনি জানালেন, ৭০ থেকে ৭৫ লাখ টাকার প্যান্ট, শার্ট ও মেয়েদের পোশাক ছিল তাঁর দোকান ও গুদামে। আগুনে সব গেছে। পুনর্বাসনের কথা শুনছেন। কিন্তু কীভাবে পুনর্বাসন হবে, তা নিশ্চিত নন। তিনি বলেন, ‘সরকার অর্থসহায়তা দিলেও কত দেবে? তা দিয়ে আমাদের কিছুই হবে না। তার চেয়ে আমাদের এখানে ব্যবসা করার সুযোগ দিলে দ্রুত ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারব।’
ডিএসসিসির মেয়র গত বুধবার গোড়ান খেলার মাঠে সাংবাদিকদের বলেছেন, সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের পর্যাপ্ত অনুদান দেবে; যাতে তাঁরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারেন। এ জন্য কাজ চলছে। বঙ্গবাজারে বহুতল মার্কেট করার উদ্যোগ আগেই নেওয়া হয়েছিল। তবে মামলা থাকার কারণে তা অগ্রসর হয়নি। এখন সময় দিতে হবে।
গতকাল বঙ্গবাজার পরিদর্শন ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ঈদের আগেই ব্যবসা করার সুযোগ করে দেওয়া হবে। তাঁদের অস্থায়ীভাবে পুনর্বাসন করা হবে। তবে কী প্রক্রিয়ায় পুনর্বাসন করা হবে, তা তিনি জানাননি।
গতকাল বিকেল পর্যন্ত সাতটি মার্কেটের চার হাজার ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী, দোকানমালিকের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আরও দুই দিন এই তালিকায় নাম ওঠানো হবে। এরপর পুনর্বাসন শুরু হবে বলে জানিয়েছে মার্কেট কর্তৃপক্ষ।
এদিকে বঙ্গবাজারের নিরাপত্তায় অস্থায়ী একটি পুলিশ নিয়ন্ত্রণকক্ষ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগ। এখানে ব্যবসায়ীরা তাঁদের পুড়ে যাওয়া ও খোয়া যাওয়া টাকা, ব্যাংকের চেক, চুক্তিনামা, দলিল, টালিখাতাসহ গুরুত্বপূর্ণ নথির বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে পারবেন।