মুলাদী (বরিশাল) প্রতিনিধি
মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র সিফাত হোসেন। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা শুরু হলে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে ১৭ জুলাই থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার।
মাদ্রাসা ছুটি হওয়ায় রাজধানীর পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার এলাকায় বসবাস করা পরিবারের কাছে যায় সে। এদিকে দিনে দিনে আন্দোলন জোরালো হয়ে ওঠে। কিশোর-তরুণেরাই আন্দোলনের অগ্রভাগে। তাই নিজেকে ঘরে আটকে রাখতে পারেনি সিফাত। সেও যোগ দেয় আন্দোলনে।
মাকে না জানিয়ে প্রতিদিন বাসা থেকে বের হয়ে আন্দোলনে যোগ দিত সিফাত। এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা শুরু হলে আন্দোলন রূপ নেয় সরকার পতনের এক দফায়। এ লক্ষ্যে ৫ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’র ডাক দেওয়া হয়। সেদিন সকাল থেকে রাজধানীতে ঢুকতে থাকে ছাত্র-জনতা।
রাজধানীও অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। ঢাকার ইংলিশ রোড ও তাঁতীবাজার এলাকায় মিছিলে অংশ নেয় সিফাত। দুপুরের দিকে পুলিশ গুলি ছুড়লে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয় সিফাতের।
সিফাতের বড় ভাই রিফাত হোসেন বলেন, ‘সিফাত মাকে না জানিয়ে দিনের বেলা আন্দোলনে যেত। ৫ আগস্ট সকালে বন্ধুদের সঙ্গে ঢাকার ইংলিশ রোড ও তাঁতীবাজার এলাকায় মিছিল করে সিফাত। দুপুরের দিকে পুলিশের সঙ্গে ছাত্র-জনতার সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয় সে। সঙ্গীরা মিটফোর্ড হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। কিন্তু তাঁদের কাছে কারও মোবাইল নম্বর না থাকায় যোগাযোগ করতে পারেননি তাঁরা।’
শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার চাহেদ আলী হাওলাদার দারুস সুন্নাহ ইসলামিয়া মাদ্রাসার আবাসিক ছাত্র ছিল সিফাত হোসেন (১৬)। বরিশালের মুলাদী উপজেলার সফিপুর ইউনিয়নের খৈলারচর গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন হাওলাদারের ছেলে সে। জাহাঙ্গীর প্রায় তিন মাস আগে জীবিকার জন্য দুবাইয়ে গেছেন। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে মেজো ছিল সিফাত।
মা সুফিয়া বেগম বলেন, ‘৫ আগস্ট রাত ১০টার দিকেও সিফাত বাসায় না ফিরলে বিভিন্ন জায়গায় খুঁজে ব্যর্থ হই। ৬ আগস্ট জানতে পারি, মিটফোর্ড হাসপাতালে বেশ কিছু অজ্ঞাতপরিচয় লাশ আছে। সেদিন বিকেলে ওই হাসপাতাল গিয়ে ছেলের মাথায় গুলিবিদ্ধ লাশ পাই। গুলিটি কানের কাছ দিয়ে একেবারে মাথার মধ্যে ঢুকে গেছে। হাসপাতালের আনুষ্ঠানিকতার কারণে ৭ আগস্ট ছেলের লাশ বুঝে পাই। পরদিন গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয় তাকে।’