সালাহউদ্দিন লাভলু, নির্মাতা ও অভিনেতা
সীমানার শুরু লাক্স চ্যানেল আই সুন্দরী প্রতিযোগিতা দিয়ে। ও যখন সেরা পাঁচে ছিল, ওই সময় আমি ‘সাকিন সারিসুরি’ ধারাবাহিক নাটকটি শুরু করি। এ ধারাবাহিক দিয়েই প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ায় সীমানা। প্রথমে একটু সন্দিহান ছিলাম, মোশাররফ করিমের বিপরীতে এত গুরুত্বপূর্ণ একটা চরিত্রে কেমন করবে! দু-তিন দিন গ্রুমিং হলো, বেশ দ্রুততম সময়ে সব আয়ত্ত করে ফেলল সে।
যখন ক্যামেরা ওপেন হলো, সীমানার অভিনয়ে সবাই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। এত ভালো অভিনয়! চরিত্রকে ও এত দ্রুত কনসিভ করতে পারত, প্রপারলি ডেলিভারি দিতে পারত। ওর কমিটমেন্ট ও সিনসিয়ারিটি আমাদের টিমের সবাইকে মুগ্ধ করেছে। ওর সবচেয়ে বড় গুণ সততা। শুটিংয়ে কখনো ফাঁকিবাজি করেনি, সময় নষ্ট করেনি।
এরপর সীমানা আমার আরও কিছু নাটকে কাজ করেছে। ‘কলেজ টুডেন’ আরেকটি নামকরা নাটক। আমি তো টিম নিয়ে কাজ করি। টিমে যারা ভালো করে, তাদের নিয়ে বছরের পর বছর কাজ চলতে থাকে। সেভাবেই ও আমাদের সঙ্গে কাজ করছিল। মাঝখানে অভিনয়ে বিরতি নিয়েছিল সীমানা।
মাসখানেক আগে আমাকে টেক্সট করল—লাভলু ভাই, আমি তোমার নাটক দিয়েই কামব্যাক করতে চাই। কিছু ছবি পাঠাল। আমি তাকে বললাম, নতুন কাজ করলে অবশ্যই তুমি থাকবে। কারণ, এত সিনসিয়ার, ডেডিকেটেড, কমিটেড আর্টিস্ট তো এই সময়ে পাওয়া যায় না। আমার পরবর্তী সিরিয়ালে ভেবেছিলাম ওকে নেওয়ার কথা। কিন্তু হঠাৎ নিউজে দেখলাম, সীমানা হাসপাতালে। অবশেষে তো ও চলেই গেল। সীমানা নেই, এটা বিশ্বাস হওয়ার মতো নয়।
ওই সময়ে যারা একসঙ্গে অভিনয় করেছে সাকিন সারিসুরিতে, সবাই কষ্ট পাচ্ছে। এই নাটকে ওর সহ-অভিনেতা ছিল মোশাররফ করিম, চঞ্চল চৌধুরী, রওনক হাসান, আ খ ম হাসান, মাসুম আজিজ, মহসীন ভাই, বাচ্চু ভাই, মধুদা। তাঁদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছে সীমানা। আমাদের মনেই হয়নি ও নতুন।
এখনো মানুষ ওই চরিত্রের নাম ধরে তাকে মনে রেখেছে—কাকলী। একজন তো বলল, কাকলী রুইতনের কাছে চলে গেল। কারণ, সাকিন সারিসুরির শেষ দৃশ্যে মারা যায় রুইতন। তার মানে, দর্শকদের মাঝে সীমানার অবস্থানটা কী, সেটা বোঝাই যাচ্ছে। কর্মই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। সীমানা তাঁর কাজের মধ্য দিয়ে আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবে।