সাক্ষাৎকার

সিনেমা ভালো হলে লস দিয়েও চালাই

দুই দশক পেরিয়ে তিন দশকে পা রাখছে দেশের স্টার সিনেপ্লেক্স। সম্প্রতি সিনেপ্লেক্সটির বিরুদ্ধে সঠিকভাবে সিনেমা না চালানো, হল থেকে সিনেমা নামিয়ে দেওয়ার মতো অভিযোগ তুলেছেন ‘শ্যামা কাব্য’ সিনেমার নির্মাতা বদরুল আনাম সৌদ এবং ‘ডেডবডি’ সিনেমার নির্মাতা মোহাম্মাদ ইকবাল। এসব নিয়ে স্টার সিনেপ্লেক্সের চেয়ারম্যান মাহবুব রহমান রুহেলের সঙ্গে কথা বলেছেন এম এস রানা

নির্মাতা বদরুল আনাম সৌদ অভিযোগ করেছেন, ‘শ্যামা কাব্য’ ঠিকমতো প্রজেকশন হয়নি, তাই সিনেমাটি তিনি তুলে নিয়েছেন। এ নিয়ে আপনার বক্তব্য কী?
আমি ব্যাপারটা ইনভেস্টিগেশন করেছি। সিনেমাটা ভালো। বসুন্ধরা সিটির হল থ্রিতে প্রজেকশনে কিছুটা সমস্যা ছিল। এটা তাঁরা আমাদের বলার পর আমরা ব্যবস্থা নিই। হল পরিবর্তন করে দিই। আমি মনে করি, তাঁদের এভাবে মিডিয়ার মাধ্যমে সবার সামনে অভিযোগ করাটা সমীচীন হয়নি। এটাও সত্যি, সিনেমাটা দেখতে দর্শক হলে আসছিল না। এটা তাঁদের ব্যর্থতা। তাঁরা প্রপার প্রচার করেননি। 

‘ডেডবডি’ সিনেমার নির্মাতা সংবাদ সম্মেলন করে আপনাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানালেন তাঁদের সিনেমাটির প্রদর্শনী বন্ধ করেছেন বলে...  
আমরা প্রিভিউ করে সেরা পাঁচটি সিনেমা চালাই। ডেডবডি সিনেমাটি অনেক পরে আমাদের দিয়েছে। তারপরও এত করে বলায়, আমরা সিনেমাটির শো দিয়েছি। কিন্তু দর্শক সেটা দেখেননি এবং যাঁরা দেখেছেন, অনেকেই নেগেটিভ রিভিউ দিয়েছেন। আমি এমন কোনো সিনেমা আনব না, যার কারণে আমার ব্র্যান্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই সিনেমা নিয়ে তাঁরা (নির্মাতা) যে প্রেস কনফারেন্স করেছেন, সেখানে বাজে বাজে কথা বলেছেন, এটা তাঁরা করতে পারেন না।  

বাংলা সিনেমার বিরুদ্ধে আপনারা ষড়যন্ত্র করছেন—এমন অভিযোগও করা হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে। 
কিসের ষড়যন্ত্র! আমরা তো চাই ভালো ভালো সিনেমা হোক। ‘হাওয়া’, ‘পরাণ, ‘প্রিয়তমা’র মতো সিনেমা হোক। আমি বিশ্বাস করি, সেটা হবে। একটা সিনেমা বানাবেন, সেটা দর্শক না দেখলে, আমি না চালালে, প্রেস কনফারেন্স করে লোক এনে আমার বিরুদ্ধে বাজে কথা বলবেন, এটা আমি গ্রহণ করব না। যে যা-ই করুক, আমার কাছে আমার কাস্টমার, সিনেমার দর্শকই সব। তাদের চাহিদা অনুযায়ী আমি কাজ করব।

সমস্যাটা কী বলে মনে করছেন?
এখন ভালো সিনেমার পাশাপাশি অনেকেই অনেক ধরনের সিনেমা বানান এবং চান যে সিনেমাটি স্টার সিনেপ্লেক্সে চলুক। কিন্তু তাঁরা টার্গেট মার্কেটের কথা চিন্তা করছেন না, নিজেদের মতো করে সিনেমা বানান। আমাকে প্রেশার দেন সিনেমাটা চলাতেই হবে। এটা তো হতে পারে না। আমি কত প্রেশার নেব! সিনেমা হলগুলো একটা শপ, সিনেমা হলো প্রোডাক্ট। মানসম্মত প্রোডাক্ট না হলে, দর্শক না দেখলে আমি কেন সেই প্রোডাক্ট শপে রাখব? আমাকে তো দর্শকের আস্থার জায়গাটা ধরে রাখতে হবে। দর্শক টাকা দিয়ে সিনেমা দেখতে আসে, তারা মনে করে যে স্টার সিনেপ্লেক্সে চলছে, তার মানে এটা ভালো সিনেমা। এমনও হয়েছে, ভালো সিনেমা বানিয়েছেন কিন্তু প্রচার করছেন না, তাই দর্শক সেই সিনেমা দেখতে আসছে না।

ভালো সিনেমা বলতে কী বোঝাচ্ছেন?
আশি-নব্বইয়ের দশকের অনেকে এখনো ওই ধাঁচের সিনেমা বানিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে ওয়ার্ল্ডওয়াইড ট্রেন্ডটা কী। মেগাস্টারদের নিয়ে সিনেমা বানালেই যে হিট হয়ে যাবে, তা কিন্তু নয়। এখন মানুষ ভালো গল্প চায়। নতুন অভিনয়শিল্পী নিয়ে ভারতে ‘লাপাতা লেডিস’ হলো। মেকিং আর গল্পের কারণেই বেশ ভালো করল সিনেমাটি। ভালো গল্পের সিনেমা হচ্ছে না বলেই আমি নিজ উদ্যোগে ‘ন ডরাই’ বানিয়েছিলাম, সিনেমাটি ৬টি ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে।

ঈদে সিনেমা মুক্তি দিলেই কি ভালো ব্যবসা হচ্ছে?
ঈদে আমরা বিদেশি সিনেমাগুলোর প্রদর্শনী বন্ধ করে দিই। কারণ, আমি চাই দেশের সিনেমাগুলো ব্যবসা করুক। কিন্তু ঈদে ১১-১২টা সিনেমা মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। এটা একেবারেই প্র্যাকটিক্যাল না। সিনেমা ভালো হলে ঈদ ছাড়াও ভালো ব্যবসা করে। সেই প্রমাণও আছে। 

অনেকেই অভিযোগ করেন সিনেপ্লেক্স সব সিনেমা চালায় না।
সিনেমা ভালো হলে লস দিয়েও আমরা চালাই। তারেক মাসুদের ‘রানওয়ে’ তার উদাহরণ। ‘পরাণ’, ‘হাওয়া’, ‘সুড়ঙ্গ’, ‘প্রিয়তমা’র মতো সিনেমাগুলো ভালো ব্যবসা করেছে। আমরা চিন্তাও করিনি ‘অ্যাভেঞ্জারস’-এর মতো সিনেমার রেকর্ড ভাঙতে পারবে দেশি কোনো সিনেমা। ওই সব সিনেমার পরিচালক-প্রযোজকদের কিন্তু কোনো অভিযোগ নেই। বরং তাঁরা সিনেমা চালিয়ে লগ্নি উঠিয়েছেন, লাভ করেছেন, সেই টাকা দিয়ে আবার সিনেমা বানাচ্ছেন। 

আপনাদের টিকিটের দাম নিয়েও অনেকের আপত্তি আছে। এ বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে?
আমাদের বেশির ভাগ হল শপিং মলে হওয়ায় ভাড়া অনেক বেশি, যার প্রভাব পড়ছে টিকিটের দামের ওপর। আরও কিছু বিষয় আছে ইউটিলিটি চার্জ, ভ্যাট, ট্যাক্স ইত্যাদি। বিদ্যুতেরও দাম বাড়ছে। সেই চাপটা পড়ছে টিকিটের ওপর। চেষ্টা করছি, কীভাবে প্রাইসটা কমানো যায়। বিশেষ করে ঢাকার বাইরে নতুন হলগুলো শপিং মলে না করার চেষ্টা করছি। তাহলে ভাড়ার যে বিশাল চাপ, সেটা কমে যাবে। টিকিটের দামও কমে আসবে।

দেশে যে হারে সিনেমা হল বন্ধ হয়েছে সে তুলনায় হল তৈরি হচ্ছে না কেন?
মূল সমস্যা হচ্ছে ভালো কনটেন্ট নেই। বছরে আমাদের অন্তত ১০০টা সিনেমা হওয়া উচিত এবং এর মাঝে অন্তত ২০টা ভালো কনটেন্ট হওয়া উচিত, যেটা ব্যবসাবান্ধব সিনেমা হবে।

স্টার সিনেপ্লেক্সের নতুন শাখাগুলো কোথায় হচ্ছে?
উত্তরার সেন্টার পয়েন্টে চারটা স্ক্রিন আসবে। নারায়ণগঞ্জে সীমান্ত সম্ভার-২-তে তিনটা স্ক্রিন করছি। বগুড়ায় দুইটা স্ক্রিন আসছে। গুলশান-বনানীর আশপাশে একটা লাক্সারিয়াস হল হবে। চট্টগ্রামে আরও একটি প্রজেক্ট হচ্ছে, কক্সবাজারেও আমাদের পরিকল্পনা চলছে, অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে। উপজেলা পর্যায়ে সিনেপ্লেক্স খোলার পরিকল্পনা নিয়েও এগিয়ে যাচ্ছি।

হলের উন্নয়নে কোনো পরিকল্পনা করছেন?
সব হলেই সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সংযুক্তি ঘটাব। সেটা সাউন্ড সিস্টেমে, সিনেমা প্রজেকশনে। আমরা প্রতিটি স্ক্রিনে লেজার প্রজেকশনের ব্যবস্থা করব। যদিও এগুলো বেশ ব্যয়বহুল, তবু আমরা সিনেমার স্বার্থে সেটা করব।

যেখানে হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, সেখানে এত হল একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য কতটা যুক্তিসংগত?
একটা দেশে বিনোদনের জন্য যে পরিমাণ সিনেমা স্ক্রিন থাকা উচিত, তা আমাদের নেই। আমি হয়তো ১০০ স্ক্রিন তৈরি করে দিতে পারব। কিন্তু সব তো আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই আমি চাই, আরও যাঁরা উদ্যোক্তা আছেন, তাঁরাও এগিয়ে আসুক, সিনেমা হল তৈরি করুক, তাহলে দেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে।

আমারই যদি ১০০ স্ক্রিন করতে পারি, তাহলে এখন যেখানে একটা সিনেমার টাকা তুলতে এক মাস লেগে যাচ্ছে, তখন হয়তো এক সপ্তাহেই টাকা উঠে যাবে। যাঁরা বলছেন সিনেমা বানিয়ে তাঁদের লগ্নি উঠছে না, তখন তাঁরাও লগ্নিতে উৎসাহ পাবেন।

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ

ঢাকা সড়ক পরিবহন: প্রশ্নবিদ্ধ কমিটিতেই চলছে মালিক সমিতির কার্যক্রম

৪০ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি করবে টিসিবি

৮ বছরে শিশুহত্যা হয়েছে ৪০০০

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির শীর্ষে বাংলাদেশ, তবে বাজারে পিছিয়ে

দেশে ব্যবসায় ঘুষ–দুর্নীতিসহ ১৭ রকমের বাধা

বিদ্যালয়ের জমিতে ৩৯১টি দোকান, ভাড়া নেয় কলেজ

সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ প্রাণহানি

সেকশন