সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছি, এটা জানার পর প্রথমেই যেটা মনে হয়, আমার গানগুলো কীভাবে সাহিত্যের আসনে বসতে পারে! এরপর এটা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করে দেখেছি যে কোথায় সংযোগ থাকতে পারে এই দুইয়ের মধ্যে, আমার গান ও শুদ্ধ সাহিত্যের মধ্যে? আজ এখানে আপনাদের কাছে সেটাই গুছিয়ে বলার চেষ্টা করছি। আশা করব, যা এখানে বলব তাতে কিছুটা অর্থবহ হয়ে উঠবে শেষ পর্যন্ত।
সেই গোড়ার দিকে যদি ফিরে যাই তাহলে বাডি হোলিকে (আমেরিকার রক এন রোল সংগীতে ভিন্নধর্মী এক কণ্ঠ) দিয়েই শুরু করতে হয়। বাডির মৃত্যু হয় বাইশ বছর বয়সে, আমি তখন আঠারো। প্রথম যখন ওর সঙ্গে আলাপ, তখনই আকর্ষণ জন্মায়। মনে হয় ওর সম্পর্কে যেন আমার গভীর মিল রয়েছে, ও যেন আমার বড় দাদা। এমনকি এটাও ভাবতাম যে আমার অনেকটাই মিল রয়েছে ওর সঙ্গে।
বাডি সেই সব বাজনাই বাজাত, যা আমার প্রিয়, যা শুনে বড় হয়েছি—‘কান্ট্রি ওয়েস্টার্ন’, ‘রক অ্যান্ড রোল’, ‘রিদম অ্যান্ড ব্লুজ’। এই তিনটি পৃথক ঘরানার বাজনা ও মিলেমিশে এক নতুন ঘরানা তৈরি করে। নতুন পরিচিতি দেয়। গানও লিখত বাডি, বড়ই সুন্দর তার সুর এবং কল্পনায় মেশানো তার কথা। গাইতও দুর্দান্ত, একই সঙ্গে বেশ কিছু স্বরে গাইতে পারত। আমি যা যা হতে চেয়েছি এবং হতে পারিনি তার আর্কেটাইপ ছিল বাডি।
অত্যন্ত শক্তিশালী এবং সংক্রামক ছিল তার ব্যক্তিত্ব এবং স্টেজে উপস্থিতি। মাত্র ছয় ফুট দূর থেকে তাকে দেখেছি, সে এক মনকাড়া ব্যাপার। ওর মুখ, হাত, কীভাবে পা ঠুকছে, বড় কালো চশমা, সেই চশমার আড়ালে চোখ, কীভাবে দাঁড়াচ্ছে, গিটারটাকে ধরে রেখেছে, পরনের নিখুঁত স্যুট—ওর সবকিছুই গিলতাম যেন। বাইশের তুলনায় একটু বেশিই লাগত ওকে। শেষবার যখন দেখি, একটা অলৌকিক ব্যাপার ঘটে। ও আমার দিকে সরাসরি তাকায় এবং কিছু একটা যেন আমার ভেতরে সংক্রামিত করে দেয়। সেটা কী, আমি জানি না। গায়ে কাঁটা দিয়েছিল।
মার্কিন সংগীতশিল্পী বব ডিলান ২০১৬ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।