মৎস্য খাতে বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্ষণীয়। চাষের মাছ উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। পাশাপাশি গত পাঁচ বছরে অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ের মৎস্য উৎপাদনের প্রবৃদ্ধিতেও বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে চলে এসেছে। এত এত সাফল্যের পরও দেশে মৎস্য আহরণ-পরবর্তী ধাপের ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়ে ওঠেনি। ফলে স্বাদুপানি ও সামুদ্রিক উৎস থেকে আহরণ করা মাছের ২৭ থেকে ৩০ শতাংশ ভোক্তাদের কাছে পৌঁছানোর আগেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বছরে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।
গতকাল বুধবার বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের মিলনায়তনে (বিএআরসি) ‘টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স টু রিডিউস ফুড লস ইন দ্য ক্যাপচার ফিশারিজ সাপ্লাই চেইন’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সহায়তায় বাংলাদেশ মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়িত একটি প্রকল্পের অংশ হিসেবে গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নষ্ট হয়ে যাওয়া এই মাছের ১৫ থেকে ১৮ শতাংশ কাঁচা মাছ। এর ফলে বছর শেষে দেশের আর্থিক ক্ষতি ২০ হাজার কোটি টাকা। তা ছাড়া নষ্ট হওয়া বাকি ১২ শতাংশ প্রক্রিয়াজাতকৃত (শুঁটকি, নাপ্পি, নোনা ইলিশ ইত্যাদি) এখান থেকে লোকসানের পরিমাণ প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। মাছ ধরার অনুপযুক্ত পদ্ধতি, দুর্বল সরঞ্জাম, অনুপযুক্ত পরিচালনা এবং সংরক্ষণের সুবিধার অভাবসহ ১০টি কারণে এ ধরনের ক্ষতি হয়।
এ ব্যাপারে এফএওর গবেষক অধ্যাপক এ কে এম নওশাদ আলম বলেন, ‘শুধু অজ্ঞতা, অবহেলার ও সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে জেলেদের দ্বারা মাছ আহরণের সময় ৭ থেকে ৮ শতাংশ মাছ নষ্ট হয়ে যায়। আর বাকি মাছ বাজারে নিয়ে যাওয়ার সময় নষ্ট হয়। এটি রোধে জেলেদের মাছ সংরক্ষণ করার বিশেষ ব্যবস্থাসংবলিত নৌকা সরবরাহ করতে হবে। এ ছাড়া তাঁদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী প্রাণিজ প্রোটিন গ্রহণের প্রায় ১৭ শতাংশ মাছ থেকে আসে। ক্রমবর্ধমান এ চাহিদা আগামী দিনে মাছের উৎপাদনকে চ্যালেঞ্জ করবে। এ জন্য দরকার টেকসই মৎস্যসম্পদ, যা খাদ্যনিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। মাছ চাষ থেকে শুরু করে আহরণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বিপণন ও বিতরণ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে মাছের শারীরিক ক্ষতি এ খাতের বড় লোকসান। এতে গুণগত মান হ্রাসের ফলে মাছ কম দামে বিক্রি করতে হয়।’
এফএওর প্রতিনিধি রবার্ট ডি সিম্পসন বলেন, ‘সরবরাহ শৃঙ্খলের ব্যাঘাতে খাদ্য অপচয় ও বর্জ্য হ্রাস করা এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গবেষণাটিতে ক্ষতির যে অগ্রহণযোগ্য মাত্রা পাওয়া গেছে, তা খাদ্য ও পুষ্টিনিরাপত্তা, মানুষের জীবিকা এবং সেই সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদের স্থায়িত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ।’
মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী শামস আফরোজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব অমল কৃষ্ণ মণ্ডল প্রমুখ।