বাগেরহাটের ফকিরহাটে বিভিন্ন পণ্যের সরকার নির্ধারিত দাম মানছেন না অনেক ব্যবসায়ী। এতে বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা। তাঁদের দাবি, নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত বাজার মনিটরিং না থাকায় ব্যবসায়ীরা অসাধু হয়ে পড়েছেন।
গত বৃহস্পতি ও গতকাল শুক্রবার ফকিরহাট বাজারের বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা যায়, সরকারের বেঁধে দেওয়া ১ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৮৫ টাকার বদলে কেউ বিক্রি করছেন ২০০ টাকায়; আবার কেউ ১৯০ টাকায়। খোলা সয়াবিন তেল ১৬৬ টাকার বদলে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা দরে।
বেশি দামে বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে বাজারের জননী স্টোরের স্বত্বাধিকারী লিপন কুমার সরকার বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত দামে বড় কোম্পানিগুলো আমাদের তেল সরবরাহ করছে না। তাই আগে বেশি দামে কেনা তেল বিক্রি করতে হচ্ছে।’
প্রায় একই ধরনের কথা বলছেন খুচরা ও মুদিদোকানিরা। তবে অনেক দোকানে সরকার নির্ধারিত দামেও সয়াবিন তেল বিক্রি করতে দেখা গেছে। বাজারে প্রায় সব দোকানে মূল্যতালিকার বোর্ড ঝোলানো থাকলেও তাতে দ্রব্যের দামের অংশটি মুছে রাখা হয়েছে।
সয়াবিন তেলের দামে নৈরাজ্য নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা গেছে। বাজার করতে আসা একটি বেসরকারি সংস্থার চাকরিজীবী সাইদুর রহমান বলেন, ‘যখন তেলের দাম বৃদ্ধির সংবাদ প্রচার হয়েছিল, তখন এই দোকানদারেরা ১৩০ টাকার তেল ২০০ টাকায় বিক্রি করেছিলেন। এখন কমানোর সময় অজুহাত দিচ্ছেন।’
পেশায় শিক্ষিকা আরেক ক্রেতা লাবণী আক্তার বলেন, ‘বলা হচ্ছে যুদ্ধের কারণে দাম বাড়ছে। কাঁচা মরিচ তো ইউক্রেন থেকে আসে না। এ দেশেই উৎপাদন হয়। তার দাম ২০০ টাকা কেজি হবে কেন? প্রতি সপ্তাহে চালের দাম বাড়ছে। দেখার কেউ নেই!’
১২ কেজির এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের সরকার নির্ধারিত মূল্য ১ হাজার ২৫২ টাকা। কিন্তু বাজারের বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা যায় সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ১০০-১৫০ টাকা বেশি বিক্রি হচ্ছে। বাজারের মোল্লাহ গ্যাস হাউসের মালিক রাসেল বলেন, ‘১২ কেজির গ্যাস সিলিন্ডার ১ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি করছি।’
অন্যদিকে নিশি স্যানিটারির স্বত্বাধিকারী শেখ আরিফুর রহমান জানান, তিনি বসুন্ধরা গ্যাস সিলিন্ডার ১ হাজার ৩১০ টাকা এবং ওমেরা গ্যাস ১ হাজার ২৯০ টাকায় বিক্রি করেন। গ্যাস সিলিন্ডারের প্রায় একই দাম চাইতে দেখা গেছে ফকিরহাটের বিভিন্ন দোকানে।
ভাই ভাই গ্যাস হাউসের স্বত্বাধিকারী উত্তম কুমার দাশ জানান, গ্যাস কোম্পানির ডিলারের কাছ থেকে তাঁদের ভোক্তাদের জন্য নির্ধারিত খুচরা মূল্যেই কিনতে হয়। তাই বাধ্য হয়েই গ্যাস বেশি দামে বিক্রি করছেন।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বাগেরহাট জেলার সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল ইমরান মোবাইল ফোনে আজকের পত্রিকাকে জানান, সরকার নির্ধারিত মূল্যের বেশি দামে পণ্য বিক্রি করা অপরাধ। সব ব্যবসায়ীর সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য তিনি আহ্বান জানান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, ভোক্তাদের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীকে আইনের আওতায় আনা হবে। এ ছাড়া সরকার নির্দেশিত মূল্যে পণ্য বিক্রির জন্য তিনি বাজার মনিটরিং করেন বলেও জানান।