কাজী সালাউদ্দিন গত কিছুদিন সংবাদমাধ্যম থেকে একটু দূরেই ছিলেন। নিয়মিত ফেডারেশনে এলেও এড়িয়ে যাচ্ছিলেন সংবাদকর্মীদের। গতকাল কিছু বিষয়ে ‘অনানুষ্ঠানিক আলোচনা’ করতেই নিজ কার্যালয়ে ডাকলেন সাংবাদিকদের।
কালকের আলোচনায় এসেছে অনেক কিছুই। সালাউদ্দিন কথা বলেছেন বাফুফের চার কর্মকর্তার সুইজারল্যান্ড সফর নিয়েও। তবে সেটি ‘অফ দ্য রেকর্ডে’। পরে ‘আনুষ্ঠানিক’ সংবাদ সম্মেলনে নারী ফুটবলকে এগিয়ে নিতে নিজের অসহায়ত্ব তুলে ধরলেন।
সাফ অনূর্ধ্ব-২০ জয়ের পর গত কদিনে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) সভাপতির কাছে দেখা করে নিজেদের কিছু দাবিদাওয়া তুলে ধরেছেন মেয়ে ফুটবলাররা। তাঁদের দাবিদাওয়া পূরণ করতে না পারার আক্ষেপ আছে সালাউদ্দিনের। গত কয়েক বছরের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় নিয়মিত দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাচ্ছেন গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যরা। সাফল্য এনে দেওয়া এই নারী ফুটবলারদের উন্নত সুযোগ-সুবিধা দিতে নিজেদের সীমাবদ্ধতার কথাই তুলে ধরলেন সালাউদ্দিন।
সালাউদ্দিন বললেন, ‘মেয়েদের কিছু চাওয়া আছে। ওদের আমরা মাসে ভাতা দিই ১০ হাজার টাকা, এটা দিতেই আমার জান বের হয়ে যায়! এবার ওরা চেয়েছে ৫০ হাজার টাকা। আমরা এর কাছাকাছি কিছু করার চেষ্টা করছি।’
মেয়েদের চাওয়ার মধ্যে অন্যতম ছিল ম্যাচপ্রতি ফি ১০০ ডলার। দাবিটা ন্যায্যই মনে করেন সালাউদ্দিন। ‘মেয়েদের প্রতিদিন গড়ে ৭০০ টাকার খাবার দিই, ওটা ওদের পোষাচ্ছে না। শক্তি সঞ্চয়ে ওদের আরও (পুষ্টিকর) খাবার দরকার। ওরা যে খাবার চায়, সেটা দিতে ১১০০-১২০০ টাকা লাগবে। তারা ভালো মানের বুট চায়’—বলছিলেন সালাউদ্দিন। গতকাল তিনি জানালেন, বাফুফে নারী বিভাগের প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরণকে নিয়ে হন্যে হয়ে এটির সমাধানের উপায় খুঁজছেন।
সংকটের মধ্যে থেকেও একের পর এক শিরোপা জেতা নারী ফুটবলের সঙ্গে তুলনা এল ছেলেদের ফুটবল নিয়েও। এক জোড়া ভালো মানের বুটের জন্য যখন বাফুফে সভাপতির কাছে যেতে হচ্ছে নারী ফুটবলারদের, সেখানে পুরুষ ফুটবলারদের মাসিক আয় আকাশছোঁয়া। জাতীয় দলে খেলা ফুটবলারদের ক্লাব থেকে আয় ৫০ লাখের কোটায়। সচ্ছল জীবনে থাকা পুরুষ ফুটবলারদের কাছ থেকে ২০ বছরে কোনো বড় সাফল্য পায়নি বাংলাদেশ। সালাউদ্দিনের দাবি, ক্লাবের ‘দুষ্ট চক্রে’ আটকে গেছে বাংলাদেশের ফুটবল। ক্লাব ফুটবলে এতটাই জড়িয়ে থাকেন ফুটবলাররা, জাতীয় দলের ম্যাচের আগে তাদের শতভাগ ফিট পাওয়া যায় না। সংবাদ সম্মেলন শেষে বিষয়টি নিয়ে আজকের পত্রিকাকে তিনি বললেন, ‘ক্লাবের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই বাফুফের। আমাদের কোনো উপায়ও নেই। আমরা যখন খেলোয়াড় চাই, তখন একটা দল চোটের কথা বলে আমাদের খেলোয়াড় দিতে চায় না।’
জাতীয় দলে ক্লাবের দাপট কমাতে বাফুফেতে বেতনভুক্ত ফুটবলার রাখার কথা একাধিকবার বলেছিলেন সালাউদ্দিন। গতকাল আবারও বললেন। ফুটবলের উন্নয়নে সরকারের কাছ থেকে ৫৮৭ কোটি বরাদ্দ চেয়েছিল বাফুফে। সেই বরাদ্দ দিয়ে নারী-পুরুষ ফুটবলারদের পারিশ্রমিক দেওয়ার পরিকল্পনা সালাউদ্দিনের। তবে বাফুফের সেই বরাদ্দ অর্থ মন্ত্রণালয়ে আটকে থাকায় হতাশা বাফুফে সভাপতি, ‘আমি যখন ডিপিপি (ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম প্রপোজাল) পাঠালাম, তখন খুব আশাবাদী ছিলাম, কিন্তু সেটা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পড়ে আছে। এটা আমি বের করতে পারছি না। তবে চেষ্টা করছি অন্যভাবে এগুলো জোগাড় করতে।’