Ajker Patrika
হোম > ছাপা সংস্করণ

কারখানার জাহাজে ঝুঁকিতে নৌপথ

সাবিত আল হাসান, নারায়ণগঞ্জ

কারখানার জাহাজে ঝুঁকিতে নৌপথ

নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জ নৌপথে দেড় যুগ ধরে লঞ্চ চালাচ্ছেন মনির হোসেন। তিনি জানান, বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পণ্যবাহী জাহাজ নদীজুড়ে এলোপাতাড়ি নোঙর করে রাখায় নৌপথটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। লঞ্চ চালাতে হচ্ছে ঝুঁকি নিয়ে। এমভি তারিকের এই চালক বলেন, ‘ব্রিজের (শীতলক্ষ্যা তৃতীয় সেতু) নিচ থিকা মুন্সিগঞ্জ পর্যন্ত জাহাজগুলা ত্যাড়াব্যাঁকা কইরা রাখে।

যাওয়ার সময় কিছুটা ফাঁকা দেখে গেলাম, ফিরে দেখি সেখানেও জাহাজ রাখছে। কতবার অনুরোধ করছি তাগোরে, কোনো কথাই শুনে না। মাঝেমধ্যে চিল্লাচিল্লি করলে জাহাজ থিকা পাথর মারে। একবার জাহাজের মধ্যে লঞ্চ চালাইতে গিয়া একটা ট্রলার ধাক্কা লাইগা ডুইবা গেছিল। এমন রিস্কের মধ্যে লঞ্চ চালাই দেইখা যাত্রীও দিন দিন কইমা গেছে।’

জানা যায়, এমনিতেই নদীর প্রশস্ততা দিন দিন কমে আসছে। তার ওপর নিতাইগঞ্জ থেকে মুন্সিগঞ্জে ধলেশ্বরীর মোহনা পর্যন্ত শীতলক্ষ্যায় এলোপাতাড়ি নোঙর করে রাখা হয় সিমেন্ট কারখানার ক্লিংকারবাহী জাহাজ। এতে আরও সংকুচিত হয়ে যায় নৌযান চলাচলের পথ।

রূপগঞ্জ থেকে মুন্সিগঞ্জ পর্যন্ত শীতলক্ষ্যার তীরে ৯টি সিমেন্ট কারখানা আছে। এর তিনটি মুন্সিগঞ্জে আর বাকি ছয়টি নারায়ণগঞ্জে। এর মধ্যে ছয়টি কারখানার জাহাজ এলোপাতাড়ি নোঙর করে রাখতে দেখা যায়। কারখানাগুলো হচ্ছে শাহ সিমেন্ট, মেট্রোসেম সিমেন্ট, প্রিমিয়ার সিমেন্ট, আকিজ সিমেন্ট, সেভেন হর্স সিমেন্ট ও মীর সিমেন্ট। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) অবশ্য বলছে, এগুলোর বাইরে সিমেক্স সিমেন্ট (ইনসি) কারখানার জাহাজও এলোমেলোভাবে রাখা হয়।

নারায়ণগঞ্জ বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক বাবু লাল বৈদ্য আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এটা সত্য, সিমেন্ট কারখানাগুলোর জাহাজ নৌপথ দখল করে রাখে। আমরা নিয়মিত তাদের সতর্ক করে আসছি। সবশেষ গত ১১ এপ্রিল আকিজ, প্রিমিয়ার, শাহ এবং সিমেক্স (ইনসি) কোম্পানিকে জাহাজ সুশৃঙ্খলভাবে রাখতে  চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের কথায় ঠিকভাবে কর্ণপাত করে না।’

নিয়ম অনুযায়ী, পণ্য খালাসের জন্য প্রতিষ্ঠানের বেসিন বানানোর কথা। গত ১৩ এপ্রিল সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সিদ্ধিরগঞ্জ ও রূপগঞ্জ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মীর সিমেন্টসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বেসিন নেই। রূপগঞ্জের মুরাপাড়ায় মাঝনদীতে জাহাজ রেখে মীর সিমেন্টের পণ্য ওঠানামা করতে দেখা যায়। বেসিন না থাকায় সিদ্ধিরগঞ্জে সেভেন হর্স সিমেন্ট (ইস্টার্ন সিমেন্ট) কারখানার পণ্যও মাঝনদীতে জাহাজে ওঠানো-নামানো হচ্ছিল। বন্দরে আকিজ সিমেন্টের বেসিন থাকলেও তাদের পণ্যবাহী জাহাজ নদীতে এমনভাবে রাখা হয়, পাশ দিয়ে অন্য কোনো জাহাজ চালাতে গেলে ধাক্কা লাগার শঙ্কা থাকে।

সেভেন হর্স সিমেন্ট কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের বেসিন রয়েছে, হয়তো আপনাদের চোখে সেটি পড়েনি। আর জাহাজ যদি নদীতে নোঙর না করা হয় তাহলে পণ্য কীভাবে খালাস করব? তবে আমাদের জাহাজ খুব বেশি সময় ধরে নদীতে থাকে না, দ্রুততম সময়েই পণ্য লোড-আনলোড করে চলে যায়।’

আকিজ সিমেন্টের প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে এক কর্মকর্তা নিজের পরিচয় না দিয়ে প্রশ্ন জেনে নেন। তিনি পরবর্তী সময়ে জবাব দেওয়ার আশ্বাস দিলেও কোনো জবাব দেননি।

মীর সিমেন্টের কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে সিনিয়র ম্যানেজার সৈয়দ মিরাজ আহসানের ফোন নম্বর দেওয়া হয়। কিন্তু বারবার চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।

গত ৬ এপ্রিল দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ঘুরে দেখা যায়, মুন্সিগঞ্জের মোক্তারপুরে প্রিমিয়ার সিমেন্টের বেসিন থাকলেও পণ্য খালাস করছিল বেসিনের বাইরে। পাশেই মেট্রোসেম সিমেন্টের বেসিন। তবে তাদেরও বেসিনের বাইরে পণ্য খালাস করতে দেখা যায়। পাশে শাহ সিমেন্ট কারখানার পণ্য খালাসও বেসিনের বাইরেই চলে। প্রতিষ্ঠানটির কয়েকটি জাহাজ নোঙর করে নদীর বড় অংশ দখল করে রাখে।

শাহ সিমেন্ট কোম্পানির মুন্সিগঞ্জ কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে কেউ কিছু বলতে রাজি হননি। কোনো কর্মকর্তার ফোন নম্বর দিতেও অপারগতা প্রকাশ করা হয়।

প্রিমিয়ার সিমেন্ট কোম্পানির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে একজন অন্যজনকে দেখিয়ে দেন। শেষে সিএফও সেলিম রেজা বলেন, ‘বিষয়গুলো আমি দেখি না। আমাদের কারখানার ওখানে লোকজন আছেন, তাঁরা বিষয়টি দেখেন।’

মেট্রোসেম সিমেন্টের প্রধান কার্যালয়ে প্রশাসন বিভাগে যোগাযোগ করা হলে তারা লিখিত আকারে প্রশ্ন নিয়ে উত্তর দেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু পরে আর জবাব পাওয়া যায়নি।

নারায়ণগঞ্জ-চাঁদপুর রুটের লঞ্চ রাসেল এক্সপ্রেস-২-এর চালক হান্নান সরকার বলেন, ‘শাহ সিমেন্ট কারখানার জাহাজ বেশি এলোমেলো কইরা রাখে। এক পাশে গুছায়া রাখলেও আমরা ঠিকমতো যাইতে পারি। নদী এমনিতেই ছোট হইতাছে। তার ওপর সিমেন্টের জাহাজ অর্ধেক নদী দখল কইরা রাখে। শীতলক্ষ্যায় ঢোকার পর আস্তে আস্তে চালাই যেন ধাক্কা না লাগে।’

আরও কয়েকজন চালক জানান, এলোপাতাড়ি জাহাজ রাখায় চলাচলের পথ সরু হয়ে গেছে। বেশ কয়েকবার জাহাজের সঙ্গে লঞ্চের ধাক্কা লাগে। মুন্সিগঞ্জের সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাস গত দুই বছরে দুটি লঞ্চডুবির ঘটনায় সিমেন্ট কারখানার জাহাজ রেখে নৌপথ সংকুচিত করাকে দায়ী করে বক্তব্য দিয়েছিলেন।

বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক শহিদ উল্যাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মীর সিমেন্ট বেসিন বানায়নি সত্য। তবে তারা বেসিন নির্মাণকাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছে। অন্যদিকে সেভেন হর্স সিমেন্ট কারখানা আমাদের নিয়ম ঠিকভাবে মানছে না। তাদের উচ্ছেদ করার চিন্তা করছি।’

 

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ

ঢাকা সড়ক পরিবহন: প্রশ্নবিদ্ধ কমিটিতেই চলছে মালিক সমিতির কার্যক্রম

৪০ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি করবে টিসিবি

৮ বছরে শিশুহত্যা হয়েছে ৪০০০

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির শীর্ষে বাংলাদেশ, তবে বাজারে পিছিয়ে

দেশে ব্যবসায় ঘুষ–দুর্নীতিসহ ১৭ রকমের বাধা

বিদ্যালয়ের জমিতে ৩৯১টি দোকান, ভাড়া নেয় কলেজ