আজ ৯ ডিসেম্বর খুলনার পাইকগাছা উপজেলার ঐতিহাসিক কপিলমুনি মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রাজাকাররা নিরীহ মানুষকে ধরে এনে শরীর কেটে লবণ ছিটিয়ে দিত। দীর্ঘ ৪৮ ঘণ্টার সম্মুখ যুদ্ধের পর এই দিনে রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। এর মধ্য দিয়ে পতন ঘটেছিল দক্ষিণ খুলনার সবচেয়ে বড় রাজাকার ঘাঁটিটি। এ সময় জনতার রায়ে আত্মসমর্পণ করা ১৫৫ জন রাজাকারকে গুলি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের মধ্য দিয়ে কপিলমুনিকে মুক্ত করা হয়।
তৎকালীন পাকিস্তানি দোসরেরা দেশব্যাপী সাধারণ নিরীহ মানুষের ওপর অবর্ণনীয় অত্যাচার-নির্যাতন চালাতে থাকে। অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকার মতো পাইকগাছার সর্বত্র প্রতিরোধ দুর্গ গড়ে ওঠে মুক্তিকামীদের সমন্বয়ে। এ সময় পাকিস্তানি দোসরেরা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঘাঁটি গড়ে তোলে কপিলমুনি রায়সাহেব বিনোদ বিহারি সাধুর বাড়িতে। ৩৫০ জনের বেশি পাকিস্তানি সেনা ও তাদের দোসরেরা অবস্থান নিয়েছিল এখানে। নিরীহ মানুষদের ধরে কপোতাক্ষ নদের তীরে ফুলতলা নামক স্থানে এনে তাঁদের শরীরের বিভিন্ন অংশে কেটে লবণ দেওয়া হতো। এসব অত্যাচারের বিরুদ্ধে পাইকগাছার বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিফৌজের ক্যাম্প গড়ে তোলা হয়।
১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর নৌ-কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী রহমত উল্লাহ দাদু, আইনজীবী স. ম বাবর আলী, শেখ কামরুজ্জামান টুকু, গাজী রফিকুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার মুজিবর, শেখ শাহাদত হোসেন বাচ্চু, মোড়ল আব্দুস সালাম, গাজী রুহুল আমীন, আবুল কালাম আজাদের যৌথ নেতৃত্বে অবশেষে ৭ ডিসেম্বর মধ্যরাতে চারদিক থেকে কপিলমুনি শত্রুঘাঁটি আক্রমণ করা হয়। দীর্ঘ যুদ্ধ শেষে ৯ ডিসেম্বর বেলা ১১টার দিকে নিরস্ত্র হয়ে ১৫৫ জন রাজাকার সাদা পতাকা উড়িয়ে মাইকে আত্মসমর্পণের ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে।