দিনাজপুরের হিলি বাজারের শাক বিক্রেতা আবেদা বেগম (৬৫)। তিনি বিভিন্ন ঝোপঝাড় থেকে শাক তুলে বাজারে বিক্রি করে সন্ধ্যায় বাড়িতে যাওয়ার সময় এক বা দুই কেজি চাল কিনে নিয়ে যান। এখন এক বস্তা শাক বিক্রি করেও এক কেজি চাল কিনতে পারছেন না। সব জিনিসের দাম বেড়েছে, কিন্তু তাঁর শাকের দাম বাড়েনি। তিনি সরকারের কাছে আবেদন জানান, যেভাবে হোক চালের দাম যেন কমানো হয়। নাহলে তাদের মতো মানুষের বাঁচাটা কঠিন হয়ে পড়বে বলে জানান এই নারী।
একই কথা জানান ভ্যানচালক শফিকুল ইসলাম। তিনি মানুষের দুই বিঘা জমি নিয়ে ধান লাগান, সেই ধান কিছু মালিককে দিয়ে নিজে চাল করে খান। কিন্তু এবার হিতে বিপরীত হয়েছে, ধান পাকার সময় ঝড়-বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গেছে, অল্প কিছু ধান পেলেও তা তিনি কম দামে বিক্রি করে দিয়েছেন।
এখন চাল কেনার জন্য বাজারে এসে হতভম্ব হয়ে পড়েছেন দাম শুনে। ৪৮ টাকা দিয়ে তাঁকে এক কেজি মোটা চাল কিনতে হয়েছে।
তিনি জানান, ‘মোটা চাল বড় লোকেরা খায় না, খায় চিকন চাল। এখন দামের কারণে মোটা চাল কিনতেও হিমশিম খাচ্ছি।’
এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে হিলি বাজারে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে ৮ থেকে ৯ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, অটোরাইচ মিলের মালিকেরা বাজারে সরবরাহ কম করায় চালের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। গোডাউনে পর্যাপ্ত চাল থাকার পরেও তাঁরা চাল বিক্রি করতে চাইছেন না। কিছু চাল বিক্রি করলেও বস্তায় প্রায় ৪০০ টাকা বেশি নিচ্ছেন।
তাঁরা আজকের পত্রিকাকে আরও জানান, ভারত থেকে আমদানি শুরু হলে চালের দাম অনেকটা কমে আসবে। অন্যদিকে ভোক্তার অভিযোগ, বাজার তদারকির ব্যবস্থা না থাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সঙ্গে চালের দাম বাড়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।
জানা গেছে, এক সপ্তাহ আগেও হিলি বাজারে মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪১ টাকায়, এখন সেই চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৪৯ টাকায়। মিনিকেট চাল ৫৩ থেকে ৫৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৫ টাকার মধ্যে, ৫২ থেকে ৫৩ টাকার শম্পা কাটারী চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে।
সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে চিকন চালের। ধানের দাম বেশি হওয়ায় চালের দাম বাড়ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যে বাজার অভিযান চালানো হয়। ওই সময় বাজার কিছুটা হলেও স্থিতিশীল থাকে, পরে আবার আগের অবস্থায় ফিরে যায়।
বাজারে চাল বিক্রেতা বাবুল হোসেন ও স্বপন কুমার আজকের পত্রিকাকে জানান, তারা বিভিন্ন অটোরাইচ মিল থেকে চাল কিনে এনে বাজারে বিক্রি করেন। কিন্তু গত এক সপ্তাহ থেকে চালের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে, অটো মিল মালিকেরা চাল বিক্রি করতে চাইছেন না, বিক্রি করলেও ধানের দাম বেশি হওয়ার কারণে তাঁরা চালের দাম অনেকটা বাড়িয়ে বলছেন, করার কিছুই নেই, দোকান চালানোর জন্য তাঁদের বাড়তি দামে চাল কিনতে হচ্ছে, বাড়তি দামে কেনার কারণে তাঁদের বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে তাঁরা আশা করছেন সরকার ভারত থেকে বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি শুল্ক কমিয়ে সুযোগ দিলে চালের দাম অনেকটা কমে আসবে।