রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে (কাপ্তাই লেক) মাছ আহরণের নিষেধাজ্ঞা আজ বুধবার রাত ১২টার পর উঠে যাচ্ছে। জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) গত সপ্তাহের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়। এতে সাড়ে তিন মাস বন্ধ থাকার পর হ্রদে মাছ ধরা শুরু হচ্ছে।
এদিকে নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়ার খবরে জেলেপাড়ায় চেনা ব্যস্ততা ফিরেছে। জাল সেলাই, নৌকা সংস্কারসহ সব প্রস্তুতি শেষ করে মাছ শিকারের অপেক্ষায় আছেন জেলেরা। কর্মচাঞ্চল্য শুরু হয়েছে মৎস্য অবতরণ ঘাটে।
বিএফডিসি সূত্রে জানা গেছে, মাছের সুষ্ঠু প্রজননের স্বার্থে প্রতিবছর মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৩ মাস কাপ্তাই হ্রদের সব ধরনের মাছ আহরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তবে হ্রদে পানি কম হওয়ায় এ বছর বন্ধের সময় ১৮ দিন বাড়ানো হয়েছিল। এই সময়ের জন্য জেলে পরিবারগুলোকে রেশন দেয় সরকার। প্রায় ২৫ হাজার জেলে এই রেশনের আওতায় আসেন। এ বছরও তাঁরা রেশন পেয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার রাঙামাটি শহরের রিজার্ভ বাজার পুরান বস্তি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, জেলেরা জাল সেলাই করছেন। কেউ নৌকা মেরামত করছেন, কেউ জাল নৌকায় তুলছেন। কেউ বাঁশের মাচাং প্রস্তুত করছেন, কেউ গাছের খুঁটি কাটছেন।
জেলে নিখিল দাশ (৪০) বলেন, ‘সব প্রস্তুতি শেষ করেছি। রাত ১২টার পর নদীতে জাল ফেলব। তার আগেই আমরা খোপে (মাছ শিকারের স্থান) জাল নিয়ে হাজির হব।’ মানিক দাশ (৫০) বলেন, ‘অনেক আশা ভরসা নিয়ে জাল-নৌকা প্রস্তুত করেছি। ভগবান সহায় হলে আশা করছি আগামী কয়েক সপ্তাহ ভালো সময় পার করতে পারব আমরা।’
এদিকে হ্রদে মাছ শিকার শুরুর খবরে মৎস্য অবতরণ ঘাটে শ্রমিকদের কর্মব্যস্ততা বেড়েছে। মাছের ড্রাম রং করা, বরফ গুঁড়া করা মেশিন ঠিক করতে দেখা গেছে শ্রমিকদের।
রাঙামাটির প্রধান মৎস্য অবতরণ ঘাটের শ্রমিক মো. মাসুদুল আলম (৩৫) বলেন, ‘আমরা মাছের ড্রাম রেডি করে ট্রলারে বিভিন্ন এলাকায় পাঠাচ্ছি। এই ড্রামে করেই বৃহস্পতিবার সকালে ঘাটে মাছ আসবে। আমরা এই মাছ ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় পাঠাব।’
এদিকে হ্রদের মৎস্য ব্যবস্থাপনাকারী কর্তৃপক্ষ বিএফডিসি প্রতিবছরের মতো এবারও মাছের পোনা অবমুক্ত করেছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর হ্রদের পানি বেশি থাকায় মাছের প্রজনন সঠিকভাবে হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির রাঙামাটির ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো. তৌহিদুল ইসলাম।
বিএফডিসির রাঙামাটির ব্যবস্থাপক বলেন, বন্ধের সময়ে বিএফডিসির নিজস্ব হ্যাচারি থেকে এ বছর ৬০ মেট্রিক টন পোনা কাপ্তাই হ্রদে ছাড়া হয়েছে। এ ছাড়া হালদা থেকে রেণু পোনা এনে ছাড়া হয়েছে হ্রদে।
তৌহিদুল ইসলাম জানান, হ্রদে মৎস্য আহরণ বন্ধের সময়ে মাছ পাচার ৮০ শতাংশ রোধ করা সম্ভব হয়েছে। এ সময়ে নৌ পুলিশের সহায়তায় ৪২০টি অভিযানে জব্দ জাল, নৌকা, মাছ নিলামে বিক্রি করে ১৪ লাখ ৭৮ হাজার ৫৯১ টাকা রাজস্ব সরকারের কোষাগারে জমা করা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে কাপ্তাই হ্রদে মাছ উৎপাদিত হয়েছে ২০ হাজার ২৮০ মেট্রিক টন।