দেন এবং পাপকর্ম ক্ষমা করে তাদের জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। তাই এই রাতকে শবে বরাত বা মুক্তির রাত বলা হয়। এই রাতে পুরো বছরের ভাগ্য, রিজিক, জন্ম, মৃত্যুসহ মানবজীবনের অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারিত হওয়ার কথা হাদিসে বিবৃত হয়েছে। মহানবী (সা.) এই মহিমান্বিত রাত নফল ইবাদতে এবং এর পরের দিনটি নফল রোজা রেখে কাটানোর নির্দেশনা দেন। তিনি নিজেও রাত জেগে বেশ গুরুত্বসহকারে রাতটি পালন করতেন। নিজের জন্য ও উম্মতের জন্য মহান আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। তাই ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে রাতটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।
ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে বিশ্বজুড়ে মুসলমানরা এই রাত উদ্যাপন করেন। আমাদের দেশেও বেশ গুরুত্বের সঙ্গে এটি পালিত হয়। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এই রাতে দল বেঁধে মসজিদে গমন করেন এবং রাতজুড়ে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন হন। কৃত গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ার জন্য আরজি জানান। রাতের শেষ প্রহরে সাহ্রি খেয়ে পরের দিনটি সিয়াম সাধনায় পালন করেন অনেকে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ইবাদতের সুবিধার্থে পরদিন সরকারি ছুটি থাকে।
এই রাতে অনেকেই ভালো খাবার-দাবারের আয়োজন করেন। হালুয়া-রুটির প্রথাও অনেক স্থানে দেখা যায়। তবে গ্রহণযোগ্য কোনো হাদিসে এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা বিবৃত হয়নি। তা ছাড়া, এই রাতে অনেককে পটকা ও আতশবাজি পোড়ানো, দল বেঁধে ঘুরে বেড়ানো, লাউড স্পিকারে উচ্চ স্বরে অনুষ্ঠান করাসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জড়াতে দেখা যায়, যা আশপাশে অবস্থান করা বিশ্রামরত মানুষের বিশ্রামে এবং ইবাদতরত ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ইবাদতে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটায়। তাই এমন কর্মকাণ্ড থেকে সবার বিরত থাকা উচিত।
অতীতের গুনাহ, পাপাচার, অন্যায়, জুলুম, অনাচার, প্রতারণা, অনিয়ম, দুর্নীতিসহ সব ধরনের অপরাধ থেকে একনিষ্ঠ মনে তওবা করাই এই রাতের সেরা শিক্ষা। ভবিষ্যতে কোনো অপরাধে না জড়ানোর দৃঢ় অঙ্গীকার করাই এই রাতের শ্রেষ্ঠ ইবাদত। পাশাপাশি এই রাতে পার্থিব জীবনের সৌভাগ্য-সমৃদ্ধি কামনা এবং পরকালের মুক্তির জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করেন মুসলমানরা।
মনে রাখতে হবে, অন্যায়, অপরাধ ও গুনাহের কাজে নিজেকে যুক্ত রাখার মানসিকতা লালন করে এক রাতের ইবাদতে আল্লাহর শাস্তি থেকে মুক্তি পাওয়া এবং পরকালীন সাফল্য লাভের আশা দুরাশা বৈকি। তাই শবে বরাত হোক ভবিষ্যতের দিনগুলো শুদ্ধ ও পাপমুক্ত রাখার দৃঢ় সংকল্পের রাত। জাতীয় জীবনের সব সমস্যা-সংকট কাটিয়ে সুস্থ-সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণ করার দৃপ্ত অঙ্গীকারের রাত। ক্ষমা, সৌভাগ্য ও কল্যাণে ভরে উঠুক সবার জীবন।