বান্দরবানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও খাদ্যদ্রব্যের পর সবজির দাম বেড়েছে। মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি সবজির দাম ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এতে অস্বস্তিতে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। সবজির বাজার সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ক্রেতারা। গত বুধবার সাপ্তাহিক হাটবারে জেলার প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র বান্দরবান বাজার ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।
বান্দরবান বাজারে সপ্তাহের রবি ও বুধবার সাপ্তাহিক হাট বসে। গত রোববার যে সবজি ২০ টাকা বিক্রি হয়েছে, গত বুধবার সেই সবজি বিক্রি হয়েছে ২৫-৩০ টাকায়। প্রতিদিনই কমবেশি দাম বাড়ে বলে জানান ক্রেতারা। পরিবহন খরচ বৃদ্ধির অজুহাতে বান্দরবানে উৎপাদিত সবজির দাম বাড়ানো হয়েছে বলে তাঁদের অভিযোগ।
কয়েকজন ক্রেতা আজকের পত্রিকাকে বলেন, বান্দরবানে উৎপাদিত শাক-সবজির দাম বেশি নেওয়ার কোনো যুক্তি নেই। আসলে সিন্ডিকেট করেই পণ্যের ইচ্ছেমতো দাম নেওয়া হচ্ছে। বাজারে সরকারের কোনো তদারকি না থাকায় এই অবস্থা তৈরি হয়েছে।
রিকশাচালক আব্দুল মান্নান বলেন, যা আয় হয়, তা দিয়ে শাক-সবজি আর চাল-ডাল কিনতেই সব শেষ। ঘর ভাড়া, সন্তানের লেখাপড়া এবং চিকিৎসার খরচ বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। দিনমজুর শাহ আলম বলেন, ‘বাজারে পণ্যের দাম লাগামহীন। এতে আমরা খুবই কষ্টে পড়ে গেলাম। দাম নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আমাদের বেঁচে থাকা কঠিন হবে।’ চাকরিজীবী শামসুল আলম বলেন, ‘প্রায় সব পণ্যের দাম দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু বেতন তো আর সেইভাবে বাড়ছে না। আমরা সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি।’
সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি টমেটো ৮০ টাকা, করলা ও বরবটি ৬০ টাকা, ঝিঙে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে বেগুন, চিচিঙ্গা, ঢ্যাঁড়স, পটোল ও লাউ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪০ টাকা দরে। মিষ্টি কুমড়া কাঁচা ৩৫ টাকা ও পাকা ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাউ, কুমড়া শাক এক আঁটি ৩০ টাকা ও পুঁইশাক আঁটি ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে মাছের বাজারে রুই ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, তেলাপিয়া ১৬০, পাঙাশ ১৬০, পাবদা ৩৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। বান্দরবান বাজারে আসা মেম্বারপাড়ার বাসিন্দা সফিকুল আলম বলেন, বাজারে প্রায় সব ধরনের শাক-সবজির দামই চড়া। অধিকাংশ সবজির দাম কেজিপ্রতি কমপক্ষে ৫০ টাকা। কিছু সবজির দাম আরও বেশি।
ঠিকাদার মো. নুর নবী বলেন, শাক-সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের ভারসাম্য রাখা যাচ্ছে না। পণ্যের দাম বাড়ার বিষয়ে সবজি বিক্রেতা মো. ছাবের বলেন, ব্যবসায়ীরা পণ্য কিনে তারপর বিক্রি করেন। ক্রয়মূল্য বেশি হওয়ায় বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম থেকে শাক-সবজি কিনে এনে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন। তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় পরিবহন ভাড়া বেশি দিতে হচ্ছে। তাই খরচ বেশি পড়ায় দাম বেশি।
তবে ক্রেতারা বলেছেন, পরিবহন খরচের নামে বান্দরবানে উৎপাদিত শাক-সবজির দামও বেশি নেওয়া হচ্ছে। এ জন্য বিক্রেতারা সিন্ডিকেট করে বেশি দাম নিচ্ছেন। নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান ও বাজার তদারকি বাড়ানোর দাবি জানান তাঁরা। জানতে চাইলে বান্দরবান জেলা প্রশাসনের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. কায়েসুর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসন বাজারে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করছে। প্রশাসন, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে বৈঠক করেছে। তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করেন। খুব শিগগিরই পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালানো হবে।