ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’র আভাসে পাকা ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা উপজেলার কৃষকেরা। একদিকে ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কা, অন্যদিকে শ্রমিক সংকটের ফলে পাকা ধান ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন তাঁরা।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে আগামী বুধ ও বৃহস্পতিবার দেশে আঘাত আনতে পারে ঘূর্ণিঝড় অশনি। আবহাওয়া অফিসের এমন খবরে উপজেলার ধানচাষিদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।
গতকাল রোববার উপজেলার বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা যায়, ইতিমধ্যে ধান কাটতে শুরু করেছেন কৃষকেরা। অনেকে আধপাকা ধান কাটতেও দ্বিধা করছেন না। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খুব শিগগিরই পাকা ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সব কৃষক।
উপজেলার চোমরখালী গ্রামের কৃষক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, শ্রমিক সংকটের কারণে পাকা ধান কাটতে পারছি না। ১ বিঘা (৩৩ শতক) জমির ধান কাটতে ৫ হাজার টাকার বেশি খরচ হচ্ছে, তার পরও শ্রমিক পাচ্ছি না। বাধ্য হয়ে জেলার বাইরে থেকে শ্রমিক এনে ধান কাটাতে হচ্ছে। এতে দৈনিক খাবারসহ একজন শ্রমিককে ৮০০ টাকা মজুরি দিতে হচ্ছে।’
যুগিপুকুরিয়া গ্রামের কৃষক আবু হোসেন জানান, এবার তিনি ১৫ বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। ধানের ফলন বেশ ভালো হয়েছে এবং অধিকাংশ জমির ধানই পেকে গেছে। ইতিমধ্যে তাঁর জমিতে ধান কাটা শুরু হয়েছে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় অশনি আঘাত হানার আগে সব ধান ঘরে তুলতে পারবেন কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তিনি।
শহিদুল হাসান নামের আরেক কৃষত বলেন, ‘এবার পাঁচ বিঘা জমিতে বোরোর চাষ করেছি। ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে এবং পেকে গেছে। কয়েকদিন পরে ধান কাটতে চেয়েছিলাম, কিন্তু শুনেছি ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আসতে চলেছে। এখন ধান কাটার জন্য শ্রমিক খুঁজছি, তবে শ্রমিক মিলছে না। শ্রমিক পাওয়া গেলেও পারিশ্রমিক অনেক বেশি দেওয়া লাগছে। এমন পরিস্থিতিতে কি করব বুঝে উঠতে পারছি না।
সোহেল রানা নামের এক বর্গাচাষি বলেন, ‘অন্যের তিন বিঘা জমি নিয়ে ধান চাষ করেছি। এ ধানের চাল থেকেই পরিবারের চাহিদা মেটে। আমি গরিব মানুষ। অধিক পারিশ্রমিক দিয়ে শ্রমিক নিয়ে এসে ধান কাটার সামর্থ নেই। ঘূর্ণিঝড়ের আগে ধান ঘরে তুলতে না পারলে পথে বসতে হবে আমাকে।’
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার উপজেলায় ১৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়। অধিকাংশ ধানের ফলনও ভালো হলেও হাইব্রিড জাতের ধানের ফলন অনেক বেশি ভালো হয়েছে। ইতিমধ্যে উপজেলার অর্ধেকের বেশি কৃষক তাঁদের জমির ধান বাড়ি তুলেছেন। সবাই এক সঙ্গে ধান কাটা শুরু করায় শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস জানান, আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসের প্রেক্ষিতে দ্রুত ধান কেটে ফেলতে কৃষকদের অনুরোধ করা হয়েছে।