করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার ১১ দফা বিধিনিষেধ দিলেও খাগড়াছড়িতে অনেকই তা মানছে না; বিশেষ করে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বেড়াতে আসা পর্যটকদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা কম দেখা গেছে। জেলার আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্র, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ পার্কসহ বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে মাস্ক না পরেই ঘোরাঘুরি করছেন পর্যটকেরা। গতকাল শনিবার খাগড়াছড়ির বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে এই দৃশ্য চোখে পড়ে।
চট্টগ্রাম থেকে আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্রে এসেছিলেন কলতান সাংস্কৃতিক সংসদের ৪০ সদস্য। বার্ষিক শিক্ষা সফরে আসা এই দলের কারও মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। মাস্ক ছাড়া বিনা বাধায় তাঁদের পর্যটনকেন্দ্র ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে। দলের সদস্য কাওসার হাসান জানান, তাঁরা আলুটিলায় বেড়াতে এসেছেন। ছবি তুলছেন, তাই মাস্ক পরেননি। তবে মাস্ক আছে।
গাজীপুরের সখীপুর থেকে বেড়াতে আসা মাসুদুর রহমান বলেন, ‘পরিবার নিয়ে এখানে বেড়াতে এসেছি। কারও মুখে মাস্ক নেই, তাই আমরাও পরিনি। তবে আমাদের পকেটে মাস্ক আছে।’
গতকাল শনিবার দুপুর ১২টায় খাগড়াছড়ির আলুটিলায় পর্যটকের ভিড় ছিল, তবে অধিকাংশের মুখে মাস্ক ছিল না। এই বিষয়ে জানতে চাইলে আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক চন্দ্র কিরণ ত্রিপুরা বলেন, ‘আমরা মাস্ক ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দিইনি। আমাদের সামনে দিয়ে সবাই মাস্ক পরে। কিন্তু পর্যটনকেন্দ্রের ভেতরে গিয়ে মাস্ক খুলে ফেলে। সবার মুখে মাস্ক আছে কি না, সেটা তো আমরা নিশ্চিত করতে পারব না।’
একই অবস্থা খাগড়াছড়ির অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র জেলা পরিষদ পার্কে। পার্কটির প্রবেশমুখে সবাইকে মাস্ক পরতে বাধ্য করছে কর্তৃপক্ষ। তবে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশের পর তা খুলে ফেলছেন পর্যটকেরা। পার্কে তত্ত্বাবধায়ক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘মাস্ক ছাড়া আমরা কাউকে প্রবেশ করতে দিচ্ছি না। প্রবেশমুখে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থাও রয়েছে। তবে পর্যটকদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে অনীহা দেখা যায়।’
খাগড়াছড়ি স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিনই খাগড়াছড়িতে করোনা সংক্রমণের হার বাড়ছে। গত দুই দিনে করোনা শনাক্তের হার ৫০ শতাংশ।
খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন নূপুর কান্তি দাশ জানান, গত বৃহস্পতিবার জেলায় ১৩ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। গত শুক্রবার ৭ জনের করোনা পরীক্ষায় ৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার প্রায় ৫০ শতাংশ। এ অবস্থায় পর্যটনকেন্দ্রসহ পুরো জেলায় স্বাস্থ্যবিধি মানাতে প্রশাসন আরও কঠোর হবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইয়াসির আরাফাত বলেন, ‘করোনার স্বাস্থ্যবিধি মানাতে প্রতিদিনই পর্যটনকেন্দ্র ছাড়াও জেলা সদর, উপজেলা পর্যায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। আমরা শুরুতেই মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য কাজ করছি। এরপরও কেউ স্বাস্থ্যবিধি না মানলে জরিমানা করা হবে। পর্যটকদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানতে যাঁদের অনীহা দেখা যায়, তাঁদের বিধি অনুযায়ী দণ্ড দেওয়া হবে।’