সম্পাদকীয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ পাস করে তাজুল ইসলাম বেছে নিয়েছিলেন একজন সাধারণ শ্রমিকের জীবন। তখন দেশের সবচেয়ে বড় পাটকল আদমজী জুট মিলে কাজ করতেন তিনি। থাকতেন শ্রমিক কলোনিতে, শ্রমিকদের সঙ্গে, শ্রমিকদের মতো। শ্রমিকদের স্বার্থে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন গড়ে তোলাই ছিল লক্ষ্য।
১৯৮৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি (ওই বছর লিপ ইয়ার ছিল। এ বছরও লিপ ইয়ার, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাস ২৯ দিনের। অন্য বছর ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিনের হওয়ায় তার মৃত্যুদিন পালন করা হয় ১ মার্চ) সামরিক স্বৈরশাসক এরশাদের লেলিয়ে দেওয়া গুন্ডাদের হাতে নিহত হয়েছিলেন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এক বিশেষ মুহূর্তে।
তিনি সুস্থ ধারার শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলার কাজ করছিলেন। হয়ে উঠেছিলেন শ্রমিকদের মধ্যে জনপ্রিয়। তিনি বেঁচে থাকলে শাসক-শোষক এবং সুবিধাবাদী শ্রমিক নেতৃত্বের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতেন। সে জন্য মনে করা হয়, তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল পরিকল্পিতভাবেই।
সাধারণ দরিদ্র কৃষক পরিবারে ১৯৫০ সালে তাজুলের জন্ম, চাঁদপুরের মতলব উপজেলার ইছাখালী গ্রামে। বেশ কষ্টের মধ্যে তাঁকে লেখাপড়া করতে হয়েছিল। তবে তিনি ছিলেন মেধাবী ছাত্র। ক্লাসে বরাবর প্রথম স্থান অধিকার করতেন। ১৯৬৬ সালে মতলব হাইস্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় তিনটি লেটারসহ এবং পরবর্তীকালে এইচএসসি পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে পাস করেন। ১৯৬৮ সালে তাজুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে বিএ অনার্সে ভর্তি হন। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় তিনি ছাত্র ইউনিয়নে যোগদান করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি
ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
তাজুল অসংখ্য তরুণের মনে সমাজবিপ্লবের স্বপ্ন জাগিয়েছিলেন। স্লোগান দেওয়া হয় ‘বিপ্লবের লাল ফুল, কমরেড তাজুল’। তিনি আত্মত্যাগের সর্বোচ্চ দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। তিনি কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হতে চেয়েছিলেন। জীবনের মোহ তাঁকে পরাজিত করতে পারেনি।