বদরগঞ্জে যমুনেশ্বরী নদীর ভাঙন দেখা দিয়েছে। উপজেলার কালা আমেরতল বড়াইবাড়ি গ্রামে ভাঙনের কবলে পড়েছে পাকা সড়ক। হুমকির মুখে রয়েছে তিন শতাধিক ঘরবাড়ি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, যমুনেশ্বরীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে প্রায় ৩০০ মিটার সড়ক। কোথাও কোথাও ১২ ফুট প্রস্থ সড়কের আট ফুট অংশ ইতিমধ্যে নদীগর্ভে চলে গেছে। সড়ক দিয়ে চলাচল অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হওয়ার পথে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, ভাঙন রোধে এই মুহূর্তে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে যেকোনো সময় সড়ক দিয়ে চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, এই সড়ক দিয়ে পশ্চিমপাড়া, মাঝারিপাড়া, নওপাড়া, গফুরেরপাড়া, চান্দামারীপাড়া, কবিরাজপাড়াসহ বিভিন্ন গ্রামের ২০ থেকে ৩০ হাজার মানুষ প্রতিদিন চলাচল করেন। পাশের মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জের মানুষেরও বদরগঞ্জ পৌর শহরে আসার সহজ পথ এই সড়ক। আগে সড়কটি দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল করত। কিন্তু নদীভাঙনের কারণে তিন বছর ধরে ভারী যানবাহন দূরের কথা, হালকা গাড়িও চলাচল করতে পারছে না। শুধু রিকশা-ভ্যান ও মোটরসাইকেল চলাচল করছে।
গত সোমবার সড়কের ছবি ক্যামেরাবন্দী করতে গেলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এলাকার মানুষ। ভ্যানচালক তহিদুল ইসলাম বলেন, ‘পাঁচ বছর ধরে সবাই আইসে আর ছবি তুলি নিয়া যায়, কাজ হয় না। এই ছবি তুলি লাভ কী?’
গ্রামের বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বন্যা হলে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের লোকজন এখানে আসা-যাওয়া করেন। বলে যান, দেখে যাচ্ছি দ্রুত কাজ হবে। কিন্তু ওই শেষ।’
সড়ক ঘেঁষে শাহাজল হকের বসতবাড়ি রয়েছে। তিনি বলেন, ‘সড়ক রক্ষা না হলে আমার বাড়িও রক্ষা হবে না।’
আরেক বাসিন্দা আবেদ আলী বলেন, ‘ভাঙা সড়ক দিয়ে রাতে চলাচল করতে গিয়ে প্রায় সময় রিকশাভ্যান ও মোটরসাইকেল নদীতে পড়ে। চিৎকার শুনে বাড়ি থেকে এসে তাঁদের নদী থেকে তুলি।’
এলাকাবাসী জানান, এই সড়ক দিয়ে গেলে বদরগঞ্জ শহরের দূরত্ব চার কিলোমিটার। রিকশাভ্যানে যেতে সময় লাগে সর্বোচ্চ ১৫ মিনিট। কিন্তু এখন অনেকে এখান দিয়ে যেত ভয় পান। তাঁরা বৈরামপুর জামবুর মোড় হয়ে বদরগঞ্জ শহরে যাচ্ছেন। এতে দূরত্ব দাঁড়াচ্ছে ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার। কিন্তু সেই সড়কের প্রস্থ কম হওয়ায় ভারী যানবাহন চলাচল করতে পারে না। যেকোনো পণ্য বিক্রি করতে ১৫ থেকে ১৮ কিলোমিটার ঘুরে শ্যামপুর হয়ে বদরগঞ্জ শহরে আসতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান বাপ্পি জানান, সড়কটি নদীগর্ভে চলে গেলেও এই ভাঙন রোধে তাঁদের করার কিছু নেই। এটি দেখবে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ বিষয়ে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু সাঈদ বলেন, ‘সরেজমিনে দেখেছি। সড়কটি রক্ষা করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ১৬ জুন চিঠি দিয়েছি এবং বিভাগীয় প্রকৌশলীর সঙ্গে ফোনে কথাও বলেছি। আশা করছি দ্রুত কাজ হবে।’