পাইকগাছায় ৩০ গ্রামের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম নৈর নদী। নদীটিতে বাঁধ ও নেটপাটা দিয়ে মাছ চাষের কারণে পানি নিষ্কাশনের পথ অনেকটাই বন্ধ হয়ে গেছে। চলতি বর্ষায় জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। নদীর বাঁধ ও নেটপাটা অপসারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তাঁরা।
গত মঙ্গলবার সরেজমিনে গেলে স্থানীয় বাদুড়িয়া গ্রামের মোবারেক আলী সানা জানান, নৈর চাঁদখালী ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে মিনহাজ নদীতে পড়েছে। নদীটি দৈর্ঘ্য প্রায় ৩ কিলোমিটার। কানাখালী মৎস্য সমবায় সমিতি এ নদীর ইজারা নিয়েছে। ইজারাদারের পক্ষে নদীটি দেখাশোনা করেন গোলক চন্দ্র মণ্ডল। তিনি বাঁধ ও নেটপাটা দিয়ে ৩০-৩৫ খণ্ড করে প্রতি খণ্ড টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছেন।
এলাকাবাসী আরও জানান, ৩০ খণ্ড থেকে লাখ লাখ টাকা আদায় করছেন তাঁরা। নেটপাটা দিয়ে মাছ চাষের ফলে পানি নিষ্কাশন বন্ধের পথে। এ নদী দিয়ে চাঁদখালীসহ অন্যান্য ইউনিয়নের প্রায় ৩০টি গ্রামের পনি নিষ্কাশন হয়। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে নেটপাটা ও বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করার ফলে এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে ধানের ফসলসহ কাঁচা ঘরবাড়ি নষ্ট হয়।
স্থানীয় মাছুম মোড়ল জানান, নৈর নদী দিয়ে চাঁদখালী ইউনিয়নের গজালিয়া, কালুয়া, বাদুড়িয়া গড়ের আবাদ, চৌমুহনী, হাঁড়িয়া ডাঙ্গা, কমলাপুর, মৌখালী, কাঁটা বুনিয়াসহ প্রায় ৩০টি গ্রামের পানি নিষ্কাশন হয়। কিন্তু নেটপাটা দিয়ে নদীতে মাছ চাষের ফলে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে গেছে। গত বছর বিলের পানি নিষ্কাশন না হওয়ার কারণে বীজতলা ও ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সে কারণে আমরা নদীর নেটপাটা অপসারণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম সরদার বলেন, আমার ওয়ার্ডের মধ্যে নৈর নদী। এ নদীতে বাঁধ ও নেটপাটা দিয়ে মাছ চাষের ফলে প্রতিবছর ধান ও বীজতলা নষ্ট হয়। আমাদের চেয়ারম্যানের কাছে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন। এ নিয়ে চাঁদখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহজাদা মো. আবু ইলিয়াস আইনশৃঙ্খলা ও সমন্বয় সভায় উত্থাপন করে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নেটপাটা উচ্ছেদ করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।
গোলক মণ্ডল বলেন, নদীটি এ বছর কানাখালী মৎস্য সমবায় সমিতি পেয়েছে। আমি সমিতির পক্ষে দেখাশোনা করি। এ বছর কোনো খণ্ড থেকে টাকা ওঠানো হয়নি। আমাকে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শিহাব উদ্দিন ফিরোজ বুলু বলেছেন ৩০ খণ্ড না করে ২টি খণ্ড করে মাছ চাষ করার জন্য। আমরা বর্ষাকালের বৃষ্টি শুরুর আগেই বাঁধ ও নেটপাটা অপসরণ করব, যাতে এলাকার পানি নিষ্কাশনে বাধা না হয়।
পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম বলেন, নদীতে বাঁধ বা নেটপাটা দিয়ে মাছ চাষ করা যাবে না। যদি কেউ নেটপাটা অথবা বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করে, তাহলে সেগুলো অপসারণ করা হবে।