উপাচার্যের পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবিতে গত বছরের ১৬ জানুয়ারি আন্দোলনে নেমেছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) শিক্ষার্থীরা। ২৮ শিক্ষার্থীর আমরণ অনশনের সাত দিন পর সরকারের উচ্চপর্যায়ের আশ্বাসে তাঁরা আন্দোলন থেকে সড়ে দাঁড়ান। তবে এক বছরেও শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ দাবিই পূরণ হয়নি। উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ স্বপদেই বহাল আছেন। আন্দোলনের সময় পুলিশের হামলার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দিতে জমা দিতে পারেনি এক বছরেও। অজ্ঞাতনামা ৩০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে করা মামলাটি এখনো ঝুলে আছে।
এদিকে আন্দোলনের সময় পুলিশের শটগানের গুলিতে মারাত্মক আহত ছাত্র সজল কুণ্ডু শরীরে ৭০টির বেশি স্প্লিন্টার নিয়ে যন্ত্রণাকাতর জীবন কাটাচ্ছেন।চিকিৎসার খরচ জুটছে না তাঁর। তাঁকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও বাস্তবায়ন করেনি কর্তৃপক্ষ।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কঠোর হয়েছে। আন্দোলনে ও অনশনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের প্রশাসনিক কাজে হয়রানি করা হচ্ছে। এমনকি উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানে সংগীত ও বিভিন্ন প্রদর্শনীতে অংশ নিতেন। আন্দোলনের পর অধিকাংশ সংগঠনকে অংশ নিতে দেখা যায়নি।
জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উপাচার্যকে কটূক্তি করে পোস্ট করায় সাত্বিক বন্দ্যোপাধ্যায় নামের এক শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কারের সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বোর্ড। সাত্বিক সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
শিক্ষার্থীদের পাঁচ দাবির মধ্যে দ্বিতীয় দাবি অনুযায়ী, তৎকালীন প্রক্টর ও ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টাকে অব্যাহতি দেওয়া হয় অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে। তবে মিথ্যা মামলাগুলো অবিলম্বে তুলে নেওয়ার কথা থাকলেও আট মাস পরে এসে শুধু সাবেক পাঁচ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নেওয়া হয়। অজ্ঞাতনামা ৩০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে করা মামলা এখনো ঝুলে আছে।
আন্দোলন চলাকালে উপাচার্যের পদত্যাগসহ অন্য দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের অনুরোধে অনশনরত ২৮ শিক্ষার্থীর অনশন ভাঙিয়েছিলেন শাবির সাবেক শিক্ষক জাফর ইকবাল ও ইয়াসমিন হক। জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমি আমার মতো চেষ্টা করে যাচ্ছি। সাবেক পাঁচ শিক্ষার্থীর মামলা তুলতেও অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। তারা (সরকার) যদি মনে করে ক্রাইসিস কেটে গেছে এখন তারা আর কিছুই করবে না, তাহলে আমার কষ্ট পাওয়া ছাড়া কিছুই করার নাই।
সার্বিক বিষয়ে জানতে শৃঙ্খলা বোর্ডের সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ
করেননি। খুদেবার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি।